খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল : বর্ষা মৌসুমে এক ঘন্টা মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হলেই পানির নিচে তলিয়ে যায় বরিশাল নগরীর প্রাণকেন্দ্র সদর রোডসহ অন্যান্য সড়ক। পৌরসভা থেকে সিটি কর্পোরেশনে রূপ নেয়া এ নগরীর জন্য সরকারী অনুদান ও বিদেশ থেকে প্রাপ্ত অর্থে অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত ড্রেন দিয়ে পানি প্রবাহ বাঁধাগ্রস্থ হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই পুরো নগরীতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।
স্লাব ও টাইলস্ দিয়ে ঢেকে রাখা বা বক্সকালভার্ট ড্রেনগুলোর ভেতরের চিত্র আরও ভয়াবহ। দীর্ঘ বছর পর পরিকল্পিতভাবে নগরীর জলাবদ্ধতা দূর করতে অতিসম্প্রতি নবনির্বাচিত মেয়র উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। প্রথমে ড্রেনগুলোর অবস্থা ও পরিস্কার করার জন্য মেয়রের নির্দেশ পালন করতে গিয়েই মিলেছে বিপত্তি।
সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচ্ছন্ন কর্মীরা নগরীর ড্রেনগুলোর ময়লা অপসারণ করতে গিয়ে দেখতে পেয়েছেন চার ফুট গভীর ড্রেনের তিন থেকে সাড়ে তিন ফুট মাটির স্তর জমে আছে। দীর্ঘদিন আটকে থাকায় জমাট বেঁধে গেছে ওই মাটি। নগরীর অধিকাংশ ড্রেনের একই অবস্থা চলে জানিয়েছেন বিসিসির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর সদর রোড ও বিএম কলেজের সামনে ড্রেনের পকেট পয়েন্ট খুলে কিছু কিছু জায়গার মাটি কেটে সড়কের ওপর রেখেছেন পরিচ্ছন্ন কর্মীরা। তিন ফুটেরও বেশি উঁচু মাটির স্তর জমেছে ড্রেনের মধ্যে। পানি নিস্কাশনের জন্য সিটি কর্পোরেশনের অতীতের মেয়রদের সময়কার নির্মান করা অপরিকল্পিত পুরো ড্রেনগুলোর একই অবস্থা।
বেল্লাল হোসেন নামের এক শ্রমিক জানান, আশপাশের ভবনের নির্মাণ সামগ্রীর সিমেন্ট মিশ্রিত পানিতে মাটি জমাট বেঁধে গেছে। ফলে কোদাল দিয়েও ড্রেনের মধ্যে জমাট বাঁধা মাটি কাটা যাচ্ছেনা। এছাড়া ড্রেনের ওপর এতো বেশি দূরত্বে ময়লা পরিস্কারের জন্য পকেট রাখা হয়েছে যে তা দিয়ে ড্রেনের ময়লা সরানো সম্ভব হচ্ছেনা। সেজন্য এখন সøাব কিংবা টাইলস্ কেটে ময়লা পরিস্কারের জন্য নতুন নতুন পকেট তৈরি করা হচ্ছে।
সিটি কর্পোরেশনের তরুন কৌশলী মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন পূর্বে অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত পানি নিস্কাশনের ড্রেনগুলো দীর্ঘদিন থেকে যথাযথভাবে পরিস্কার না করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আর এ জন্যই সামান্য বৃষ্টিতেই পুরো নগরীর সড়কগুলোতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, মাটি জমার জন্য মূলত দায়ী আশপাশের নির্মাণাধীন ভবন মালিকরা। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিসিসির দায়িত্বশীলদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আনিসুজ্জামান জানান, দায়ী ভবন মালিকদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরও জানান, নগরবাসীকে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে আগামী বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই মেয়রের কঠোর নির্দেশে নগরীর সবগুলো ড্রেন পরিস্কারের জন্য পরিচ্ছন্ন কর্মীরা কাজ শুরু করেছে।
বিসিসির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, ড্রেনগুলো পরিস্কার করতে গিয়ে দেখা গেছে মাটির স্তর জমে প্রায় সবগুলো ড্রেন ভরে গেছে। সদর রোডের ড্রেন পাঁচ ফুট প্রস্থ ও চার ফুট গভীর। সেখানে মাটি জমার পর পানি প্রবাহিত হওয়ার জায়গা রয়েছে মাত্র আধা ফুটের মতো। তিনি আরও বলেন, শুধু সদর রোড নয়, অন্যান্য এলাকাতেও একই অবস্থা। ফজলুল হক এভিনিউর টিঅ্যান্ডটি অফিসের সামনের ড্রেনে পাওয়া গেছে তারের স্তুপ। ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অপসোনিনের কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য নির্গত হচ্ছে ড্রেনে। ফলে প্রাণহানির আশঙ্কায় ওই কারখানার আশপাশের ড্রেন শ্রমিকরা পরিস্কার করতে পারছে না।
এ ব্যাপারে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের বরিশাল শাখার সাধারণ সম্পাদক কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, নগরীতে নির্মাণাধীন ভবনের পাইলিং পাইপের সংযোগ দেয়া হয়েছে বিসিসির ড্রেনে। ফলে ইট-বালু-সিমেন্ট মিশ্রিত বর্জ্যের স্তর জমে পানি নিস্কাশনের ড্রেনগুলো আটকে যাচ্ছে। এজন্য দায়ী ভবন মালিকদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি মেয়রের প্রতি জোর দাবি করেন।
আপনার মতামত লিখুন :