সাইফুল টিটো: নিথর মাহবুব। একজন পেশাদার মাইম শিল্পী। মাইম নিয়ে কাজ করছেন দীর্ঘদিন ধরে। স্বপ্ন দেখেন একদিন এই শিল্প ছড়িয়ে পড়বে দেশময়। যে অনুযায়ী কাজও করে চলেছেন তিনি। তৈরি করেছেন অনেক মাইম শিল্পী। প্রথমদিকে একক মূকাভিনয় পরিবেশন শুরু করলেও বাংলাদেশে মূকাভিনয়ের প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে গড়ে তোলেন একটি দলীয় মূকাভিনয়ের সংগঠন ‘মাইম আর্ট’। মাইম করার পাশাপাশি অন্য অভিনয়ও করছেন তিনি, যুক্ত আছেন সাংবাদিকতার সাথে। আমাদের সময় ডটকমকে দেয় এক টেলিফোন সাক্ষাতকারে আক্ষেপের সাথে জানান ‘আমি অনেক মাইম শিল্পী তৈরি করেছি দেশের জন্য। কিন্তু এদের অনেকেই মাইম শিখে বিদেশে চলে গিয়েছে। অনেকে আমার ব্যাপারে ভেবেছিলেন আমিও বোধহয় দেশের বাইরে চলে যাবো। কিন্তু আমি তো যাইনি, আর কখনও যাওয়ার ইচ্ছাও নাই। আমি যা করার দেশের জন্যই করেছি, আজীবন দেশের জন্যই করে যাবো।
মাইমের জন্য এখন কী করছেন জানতে চাইলে নিথর মাহবুব বলেন, ‘আগে প্রচুর কর্মশালা করাতাম, অনেক বেশি। তখন খুব চাপ হয়ে যেতো। আশার কথা হচ্ছে এখন আমার বাইরেও অনেকে অনেক কর্মশালা করাচ্ছেন। এই কারণে আমি একটু কমিয়ে দিয়েছি। তবে সামনেই একটা কর্মশালা আছে, মার্চের তের তারিখ পর্যন্ত ফর্ম জমা দেয়ার শেষ সময়। এছাড়াও ইউটিউবে মাইম বিষয়ক টিউটরিয়াল তৈরি করে আপলোড করবো, এখন তার কাজ চলছে।’
মাইম আর্টকে পেশা হিসেবে নেয়া যায় কি না। এমন প্রশ্নের জবাবে নিথর বলেন, ‘দেখেন আমাদের দেশে যদি সার্বিক ভাবে বলি তাহলে বলবো যত পার্ফমিং আর্ট আছে এই ধরেন নাচ, মঞ্চ অভিনয় বা টেলিভিশন অভিনয় এসব চট করে তো কেউ পেশা হিসেবে নিয়ে খেয়ে পরে বাঁচতে পারবে না হয়তো। কিন্তু একটা সময় যদি এর পিছনে ব্যায় করে কেউ, লেগে থাকে, সময় দেয়, শিল্পটাকে আঁকড়ে ধরে রাখে তাহলে সে কেন পারবে না? মানুষ তো প্রচুর সম্ভাবনাময়ী। আমি বিশ্বাস করি সবার দ্বারাই সব সম্ভব। অবশ্যই পারবে। আমি পারলে অন্যরা পারবে না কেন? আর সর্বপরি একটা কথা কি জানেন- শিল্প করতে হয় ভালোবেসে। কোন কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা না করে। তবেই সেই শিল্প আপনাকে কিছু দেবে। কিন্তু এখন যদি আপনি এসেই ভাবেন লাখ লাখ টাকা আয় করবেন, তা তো সম্ভব না। আপনি শিল্প থেকে কিছু পেতে চাইলে আপনাকেও ঐ শিল্পটাকে কিছু দিতে হবে, প্রচুর অনুশীলন করতে হবে, সময় দিতে হবে ভালোবাসতে হবে।’
মাইম প্রতিবাদের একটি নিরব ভাষা। এদেশেরই মাইম শিল্পী পার্থ প্রতিম মজুমদার আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত হয়েছেন। পেয়েছেন ফ্রান্স সরকারের শেভালিয়র উপাধি। সেই দেশে মাইম কি পেশা হিসেবে গড়ে উঠেছে? মঞ্চনাটক কিংবা নৃত্যকলার মতো হচ্ছে না কোন রেগুলার শো। তার পরও এই শিল্পের উপর নির্ভর করে একজন শিল্পী কিভাবে বেঁচে থাকতে পারেন? এ বিষয়ে নিথর মাহবুব বলেন, ‘দেখেন এখন আর পৃথিবীটা আগের মতো নেই। আপনার কাছে ইন্টারনেট আছে মানে আপনি নিজেকে বিশ্বের সামনে মেলে ধরতে পারবেন। সে সুযোগটা কিন্তু বছর দশেক আগেও ওভাবে ছিলো না। এখন আপনি যদি একটি ভালো কাজ করেন আর সেটা ইউটিউব বা ফেইসবুকে আপলোড করেন, তাহলে মানুষ অবশ্যই দেখবে। কেন দেখবে না?
আমরা দেখিনা? খুঁজে খুঁজে দেখি। এখন ইউটিউব টাকা দিচ্ছে, সম্প্রতি ফেইসবুকও ভিডিওতে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে টাকা দিচ্ছে। কিন্তু তার আগে কথা হচ্ছে যে এটা করবে তাকে অনেক ভালো শিল্পী হতে হবে। কাজটা ভালো হতে হবে। আর যদি সেটা না হয় তো আপনি যেখানেই করেন না কেন মানুষ সেটা দেখবে না। এইজন্যই আমি বলি আগে শিল্পটা বুঝতে হবে, ভালোবাসতে হবে। অবশ্যই ঐ শিল্পটা আপনাকে বাঁচাবে, এগিয়ে নিয়ে যাবে। আর তা শুধু মাইম নয়, যে শিল্পের বিষয়ে আমার একই কথা। শিল্পটাকে ভালোবাসুন, শিল্পের দর্শনটাকে বোঝার চেষ্টা করুন, সেও আপনাকে বুঝবে।’
পার্থ প্রতিম মজুমদার সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, ‘আমার পরম সৌভাগ্য যে আমি অল্প সময়ের জন্য হলেও ওনার সহচর্য পেয়েছি। ওনার সাথে থাকার সুযোগ পেয়েছি। সরাসরি কোন প্রতিষ্ঠানে ওনার ছাত্র না হলেও আমি নিজেকে ওনার শিশ্য মনে করি, উনিও আমাকে ওনার ছাত্র মনে করেন।
এটা আমার সৌভাগ্যই বলতে হবে।’ তাঁর সাথে যোগাযোগ আছে কি না জানতে চাইলে এই মাইম শিল্পী বলেন, ‘দাদার সাথে আমার রেগুলার যোগাযোগ হয়। গত রাতেও ম্যাসেঞ্জারে কথা হয়েছে। দাদা আবার দেশে আসলে আমরা গতবারের মতো আবারও একসাথে সারা দেশে কর্মশালা করবো, করাবো। মাইমের প্রসারে দাদা একজন নিবেদিত প্রাণ মানুষ। এখন দেশের বাইরে আছেন বলে হয়তো অনেক কিছু সম্ভব না। তবে উনি যখন দেশে আসেন কর্মশালা নিয়ে পড়ে থাকেন সব সময়। গতবার আমরা প্রতিটি জেলায় কর্মশালা করিয়েছিলাম। আবার করবো।’
আপনার মতামত লিখুন :