প্রভাষ আমিন : ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলামকে অভিনন্দন। অল্প সময়ের জন্য হলেও আশা করি তিনি তার নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নে আন্তরিক হবেন, প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের অসমাপ্ত কাজ শেষ করবেন। ঢাকাকে আরো সচল, সবুজ ও বাসযোগ্য করবেন। তবে যেভাবে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন, তা গৌরবের নয়। এমন একতরফা নির্বাচনে জয়ী প্রার্থীরও উৎসবে সামিল হতে লজ্জা লাগে। তবে এ ক্ষেত্রে আতিকুল ইসলামের কোনো দায় নেই। তিনি তো আর বিএনপিকে দূরে ঢেলে রাখেননি। এমন হাস্যকর নির্বাচনের দায় প্রথমত বিএনপির, তারপর আওয়ামী লীগের, তারপর নির্বাচন কমিশনের। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি। যে কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে অংশ নেয়ার অধিকার যেমন আছে, তেমনি অংশ না নেয়ারও অধিকার আছে। তবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে কোনো অবস্থান স্থির করতে পারেনি। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নিলেও আগে-পরের সব স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। আবার ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিলেও এখন আবার স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। ওদিকে ডাকসু নির্বাচনে কিন্তু ছাত্রদল অংশ নিচ্ছে। আমি মানছি, সরকারি দলের জয়ের বৈধতা দেয়ার জন্য তো বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না। তবে নির্বাচনে অংশ নেয়া না নেয়ার ব্যাপারে একটা সুস্পষ্ট রাজনৈতিক অবস্থান থাকা দরকার। সিটি নির্বাচন হাস্যকর হওয়ার দায় আওয়ামী লীগকেও নিতে হবে। তারা নির্বাচনটিকে অংশগ্রহণমূলক করার কোনো রাজনৈতিক উদ্যোগ নেয়নি। ৩০ ডিসেম্বর যে অবিশ্বাস্য নির্বাচন হয়েছে, জাতিকে সেই শক কাটিয়ে ওঠার কোনো সুযোগ দেয়নি আওয়ামী লীগ। বিএনপি কেন আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে, তার কোনো জবাব নেই তাদের কাছে। আর নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত তাদের ওপর আস্থা রাখার মতো কিছু করতে পারেনি।
তাই ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচন মহা হাস্যকর হওয়ার কোনো দায় না থাকলেও গালি শুনতে হচ্ছে আতিকুল ইসলামকেই। ২৮ ফেব্রুয়ারি বৃষ্টিবিঘ্নিত আবহাওয়ায় মুফতে পাওয়া ছুটিটি নগরবাসী উপভোগ করেছে তারিয়ে তারিয়ে। অনেকে টানা তিনদিনের ছুটি পেয়ে ঈদ বানিয়ে ফেলেছেন। তাই ২৮ ফেব্রুয়ারি ভোট কেন্দ্রে সবকিছুই ছিলো, খালি ভোটার ছাড়া। আমি আগেই লিখেছিলাম, আতিকুল ইসলাম বিপুল ভোটে না হলেও বিশাল ব্যবধানে জিতবেন। কিন্তু এখন দেখছি তিনি বিশাল ব্যবধানে তো বটেই বিপুল ভোটেও জিতেছেন। এটাই রহস্যজনক। ২৮ ফেব্রুয়ারি দিনভর সিইসি, প্রার্থী, গণমাধ্যম- সর্বত্রই ভোটারহীন নির্বাচন নিয়েই আলোচনা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নির্বাচন নিয়ে নানা মজা হয়েছে। সবাই ভোটারদের না আসাটা মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু রাতে ফলাফল ঘোষণায় সবাই চমকে গেছেন। সব মিলিয়ে ৯ লাখ ২৩ হাজার ২৬ জন মানুষ মেয়র প্রার্থীদের ভোট দিয়েছেন। এরমধ্যে আতিকুল ইসলামই পেয়েছেন ৮ লাখ ৩৯ হাজার ৩০২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির শাফিন আহমেদ ৫২ হাজার ৪২৯ ভোট। স্বাভাবিক নির্বাচন হলে ফলাফল এমনই হতো। তবে ৯ লাখের বেশি মানুষ ভোট দিতে গেছেন, এটা কেউ বিশ্বাস করবে না। খোদ রাজধানীতে সবার চোখে ভোট কেন্দ্র খা খা বিরানভূমি, আর বাক্সে ৯ লাখ ভোট! নিশ্চয়ই ভুতে ভোট দিয়েছে।
ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের অনুপস্থিতির বিষয়টি স্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও। তিনি ভোটারদের কেন্দ্রে না আসার জন্য ৫টি কারণও ব্যাখ্যা করেছেন। সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক হলেও নির্বাচনটিকে পুরোপুরি ভালো বলেননি। তিনি এই নির্বাচনকে ২০০১ সালে বিএনপি আমলে অনুষ্ঠিত ঢাকা সিটি নির্বাচনের সাথে তুলনা করে বলেছেন, সে নির্বাচনের চেয়ে এটি ভালো হয়েছে। তার মানে নির্বাচন ভালো হয়নি, মন্দের ভালো হয়েছে। কিন্তু গণতন্ত্রে আসলে এমন তুলনার কোনো সুযোগ নেই। সব নির্বাচনকেই হতে হবে অংশগ্রহলমূলক, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ। এই মানদণ্ড থেকে আমরা অনেকদূর চলে এসেছি।
লেখক : হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ
আপনার মতামত লিখুন :