শিরোনাম
◈ জিম্মিদের ছেড়ে দিতে চায় হামাস, যুদ্ধ সমাপ্তির জন্য পূর্ণাঙ্গ চুক্তির দাবি ◈ চট্টগ্রাম-নারায়ণগঞ্জ পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহন শুরু মে-তে, সাশ্রয় হবে কোটি টাকা ◈ দূতাবাসের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও প্রবাসীদের সেবা নিশ্চিতের নির্দেশ পররাষ্ট্র উপদেষ্টার ◈ রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের স্ত্রী সহ দেশ ত্যাগে আদালতের নিষেধাজ্ঞা ◈ ভারতে সংখ্যালঘু সুরক্ষা নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগ প্রত্যাখ্যান করল দিল্লি, পাল্টা দিল নজর ঘোরানোর অভিযোগ ◈ ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত ২, ট্রাম্প বললেন ‘বন্দুক নয়, মানুষ গুলি করে’ ◈ পাকিস্তানের খনিজ ভাণ্ডারে ট্রাম্প প্রশাসনের নজর, বিনিয়োগে বাধা নিরাপত্তা ও অবকাঠামো সংকট ◈ এবার চীনের সঙ্গে শুল্ক যুদ্ধ শেষের ইঙ্গিত ট্রাম্পের, টিকটক চুক্তি বিলম্বিত হতে পারে ◈ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত, পারস্পরিক স্বার্থে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার আহ্বান বিশেষজ্ঞের ◈ হার্ভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের হুঁশিয়ারি

প্রকাশিত : ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৩:৩৪ রাত
আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৩:৩৪ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দেয়ালিকার হাত ধরে মাদ্রাসায় বেড়েছে বাংলা ভাষার চর্চা

শারাফাত শরীফ : দেয়ালিকা বা দেয়াল পত্রিকার প্রচলন ছিলো আধিকাল থেকেই। মুদ্রণ যন্ত্র, টাইপ রাইটার এবং কম্পিউটার ব্যবহার শুরু হবার পূর্বে এ নান্দনিক সাহিত্যপত্রের ব্যাপক প্রচলন ছিল। বিশ্বের অনেক নামিদামি স্কুল-কলেজে বের হয় দেয়াল পত্রিকা। বাংলাদেশের স্কুল-কলেজ ও ভার্সিটিগুলোতেও প্রতিবছর দেয়ালিকা করা হয়। এই দেয়ালিকার স্পষ্ট কোন ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোতে দেয়ালিকা বের করার ইতিহাস খুব বেশি আগের নয়। চলমান কওমি মাদ্রাসার সূচনা হয়েছে ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসা থেকে। সেই হিসাবে বলা যায়, মাদ্রাসাকেন্দ্রিক দেয়ালিকার মূল শেকড় দেওবন্দ থেকেই এসেছে।

১৯৫২ সালে আমাদের মাতৃভাষা আন্দোলন হয়েছিল। কিন্তু দেওবন্দ পড়ে আসা বাঙালি ছাত্রদের মাঝে, বাংলাদেশি আলেম-ওলামাদের বাংলা ভাষা চর্চা অনেক কম ছিল। বরং বলা যায় উর্দু ভাষাচর্চা তুলনামূলক বেশি ছিল। উর্দু ভাষার প্রভাবমুক্ত করে বাংলাভাষায় ধর্মীয় কাজে অবদান রেখেছেন পরবর্তী সময়ে অনেকেই। একটা সময়ে মাদ্রাসার পরিমন্ডলে বাংলা ভাষাকে হিন্দুদের ভাষা মনে করা হতো। বাংলায় গল্প-কবিতা পড়া বা রচনা করার চেয়ে উর্দু-ফার্সি কবিতা নিয়ে বিভোর থাকতে হতো মাদ্রাসাপড়ুয়াদের। সেই অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসতে অনেকেই অবদান রেখেছেন। যেমন- মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী রহ. প্রথম বাংলা ভাষায় তাফসির লিখেন এবং শায়খুল হাদিস আজিজুল হক রহ. প্রথম বুখারি শরিফের বাংলা অনুবাদ করেন। কাজী মুতাসিম বিল্লাহ রহ. ১৯৫৬-৫৭ সালে দেওবন্দ পড়ে দেশে ফেরেন। তিনি নিজে বাংলা ভাষার উপর পাণ্ডিত্য অর্জন করেন এবং নিজ ছাত্রদের তিনি বাংলা ভাষার প্রতি আগ্রহী করে তোলেন। আজকের বাংলাদেশে কওমি আলেম-ওলামার বাংলা ভাষায় অগ্রগামীতায় তার অবদান অনস্বীকার্য। তার অন্যতম ছাত্র মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। যিনি ছাত্রদের বাংলা ভাষায় যোগ্যতা অর্জনে অনেক কাজ করেছেন। প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘লাজনাতুত্বলাবা’ নামের একটি ছাত্র সংগঠন।

সত্তর দশকের মাঝের দিকে মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ তখন ফরিদাবাদ মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন। বাংলা ভাষার প্রতি কতক তালিবুল ইলমের আগ্রহের কারণে তিনি এ পথে অগ্রসর হন। যাদের অন্যতম ছিলেন মাওলানা আবুল ফাতাহ মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া, মাওলানা ইসহাক ফরীদি, ড. মুশতাক আহমদ, রুহুল আমিন সিরাজী প্রমুখ। এরা প্রত্যেকে তখন বাংলা ভাষাচর্চা শুরু করেন। এদের নেতৃত্বেই মাদরাসা জগতে সর্বপ্রথম দেয়ালিকা বা দেয়াল পত্রিকা বের হয়। ধারণা করা হয় সময়টা ছিল ১৯৭৭-৭৮ সাল।
১৯৮১-৮২ সনে মালিবাগ জামিয়ায় দেয়ালিকার সূচনা হয়। বর্তমানে প্রতিবছর তিনটি করে ছয়টি দেয়ালিকা করা হয়। আরবি দেয়ালিকার নাম রাখা হয়েছে, ‘আল-হাদি’ আর বাংলা দেয়ালিকার নাম রাখা হয়েছে 'ইনসানিয়্যত।’ এগুলোর দেখাশুনার দায়িত্বে আছেন মাওলানা নাসিম আরাফাত। যিনি একজন আরবি ও বাংলা সাহিত্যিক। একাধারে ইংরেজি ভাষা সাহিত্যের উপরও রয়েছে তাঁর অগাধ জ্ঞান। কওমি আলেমদের বাংলা সাহিত্যচর্চা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ঢাকায় বাংলা ভাষায় দক্ষ আলেম ছিলেন দুজন। একজন কাজী মুতাসিম বিল্লাহ, অপরজন আজিমপুর কবরস্থান মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবদুল্লাহ। তারা উভয়েই নজরুল-রবীন্দ্র, ফররুখ ছাড়াও বাংলা সাহিত্যের অন্যান্য কবিদের রচনাবলি পড়তেন। একজন আলেম হয়েও এসব পড়াটা তখনকার সময়ে বিস্ময়কর ব্যাপার ছিল।’

কওমি মাদ্রাসা থেকে এখন পাক্ষিক-মাসিক বা দ্বিমাসিক বেশ কয়েকটি পত্রিকা বের হয়। কিন্তু দেয়ালিকা বের হয় অধিকাংশ মাদ্রাসা থেকেই। যদিও দেয়ালিকার লেখাগুলোকে সংরক্ষণ বা অন্য কোন কাজে লাগানো হয় না। এ সম্পর্কে বিশিষ্ট লেখক ও অনুবাদক কাজী আবুল কালাম সিদ্দিকী বলেন, ‘নব্বই দশকের অনেক আগ থেকেই চট্টগ্রামের জামিয়া পটিয়া মাদ্রাসায় দেয়ালিকা করা হয়। আশির দশকের সময়ে দেয়ালিকার যে প্রয়োজনীয়তা ছিল, এই একবিংশ শতাব্দীর ঊনিশ সালে এসে সে প্রয়োজনীয়তা লোপ পেয়েছে।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়