জাহিদুল কবীর মিল্টন: কাঠের তৈরি নানা তৈজসপত্র তৈরি করে ভাগ্য বদলেছেন যশোরো কেশবপুর উপজেলার চার গ্রামের মানুষ। কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এসব গ্রামের মানুষের ব্যস্ত সময় কাটে মোমদানি, ফুলদানি, চুড়ির আলনা, কলস, বাটিসহ নিত্যব্যবহার্য নানা সামগ্রী তৈরিতে। আর এ কাজের মাধ্যমে নিম্ন আয়ের ছয় শতাধিক পরিবার এখন স্বাবলম্বী। নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে কেশবপুর উপজেলার আলতাপোল গ্রামের এক ব্যক্তি ভারত থেকে শিখে এসে কুটির শিল্পের কাজ শুরু করেন। অল্প দিনেই সফল হন তিনি। তার দেখা দেখি আলতা পোল, কন্দর্পপুর, বড়েঙ্গা ও মঙ্গল কোটসহ আশপাশের গ্রামগুলোর অনেকেই জড়িয়ে পড়েন এ শিল্পের সঙ্গে। লাভ ভালো হওয়ায় দিনে দিনে বাড়ছে এর ব্যাপকতা। কেশবপুরের ওই চার গ্রামে অন্তত ৪০০ কারখানা রয়েছে। এসব কারখানার মালিক-শ্রমিক, কাঠ ব্যবসায়ীসহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কমপক্ষে ২০ হাজার মানুষের জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে।
আলতাপোলে এক কারখানায় কর্মরত শ্রমিক রনি বিশ্বাস জানান, মূলত মেহগনি কাঠ থেকেই তারা এসব জিনিসপত্র তৈরি করেন। বেশ আগে থেকেএ কাজ শুরু হলেও এর ব্যাপকতা লাভ করে এ অঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগ আসার পর। সফিউল নামে আরেক শ্রমিক জানান, প্রতিদিন তারা সব মিলিয়ে ৫০ থেকে ৬০ খেলনা বা তৈজষ তৈরি করতে পারেন। প্রতি পিসের মজুরি দুই থেকে সাত টাকা। গড়ে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা আয় হয়। এই কাজ করে তারা বেশ ভালো ভাবে সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান। এসব কারখানায় ছোট-ছোট কাঠের টুকরা দিয়ে তৈরি হচ্ছে বাহারি ডিজাইনের মোমদানি, ফুলদানি, কলস, বাটি, পাউডার কেস, বয়াম, ডিম সেট, খুনতি, হামাম, পিঁড়ি, মেয়েদের চুড়ি রাখার আলনাসহ নানা সামগ্রী।
একটি কারখানার মালিক অজিয়ার রহমান জানান, বছর দশেক আগে অন্যের জমিতে কামলা খাটতেন তিনি। এরপর শুরু করেন কাঠের ব্যবসা। পরে সেখান থেকে তৈরি করেন কুটির শিল্পের এই কারখানা।তিনি বলেন, ‘কারখানা দেওয়ার পর আমার অধীনে কাজ করেন ৫-৬ জন। তাদের দৈনন্দিন রোজগার খুব বেশি না হলেও তিনবেলা খেয়ে পরে ভালো ভাবেই পার করছেন। আর তাদের তৈরি পণ্যসামগ্রী ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ দেশের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে পাঠানো হয়।’ এর ফলে যে আয়-রোজগার হয়,তাতে সন্তোষ্ট কারখানা মালিক অজিয়ার।
কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরীফ রায়হান কবীর জানান, কেশবপুরের বিভিন্ন সম্প্রদায় নানা কুটির শিল্পের সঙ্গে জড়িত। তাদের তৈরি এসব পণ্য বেশ সমাদৃতও। ইতোমধ্যে সরকারের তরফ থেকে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের উন্নত প্রশিক্ষণ, ঋণদান কর্ম সূচিসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি বিশ্ব ব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল এই শিল্প পরিদর্শন করেছেন। তারা এসব পণ্যের মান আরও উন্নত এবং উৎপাদিত পণ্যবিশ্বের অন্যান্য দেশে বাজারজাতকরণের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।’