শিরোনাম
◈ পছন্দের লোক নিয়োগ দিতে বদলে দেয়া হয় মেট্রোরেলের নিয়োগবিধি ◈ আসছে বছর খেলাপি ঋণ ছাড়াতে পারে পাঁচ লাখ কোটি টাকা ◈ বঙ্গবাজারে অগ্নিসংযোগ, তাপসসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা ◈ (২৪ নভেম্বর) বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার ◈ যে দোয়া ‘জান্নাতের গুপ্তধন’ ◈ সর্বকালের সেরা ধনী ইলন মাস্ক: ফোর্বসের দাবি ◈ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়: আন্দালিভ রহমান পার্থ ◈ আমাকে স্যার বলার দরকার নেই, আমি আপনাদের ভাই: উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ◈ আবু সাঈদের মৃত্যু নিয়ে শেখ হাসিনার বক্তব্য কতটুকু সত্য? ◈ সাংবাদিক নূরুল কবীরকে বিমানবন্দরে হয়রানির অভিযোগ, তদন্তের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

প্রকাশিত : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৯:১৮ সকাল
আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৯:১৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নৌ বাণিজ্য দপ্তরকে নিজস্ব জনবলে শক্তিশালী করতে হবে

আশীষ কুমার দে : জাতীয় অর্থনীতির সঙ্গে নৌ পরিবহন ব্যবস্থা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই এই ব্যবস্থার উন্নয়ন, আধুনিকায়ন ও সহজীকরণের প্রয়োজনীয়তাও অপরিহার্য। বাংলাদেশে নৌ পরিবহন ব্যবস্থা দুটি আইন দ্বারা পরিচালিত হয়। অভ্যন্তরীণ জলসীমায় (নদী ও সাগর উপকূল) নৌ চলাচলের জন্য রয়েছে ‘অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল অধ্যাদেশ (আইএসও) ১৯৭৬’। তবে আমার লেখাটি সমুদ্র ও উপকূলগামী নৌ পরিবহন ব্যবস্থা সম্পর্কিত; যা ‘মার্চেন্ট শিপিং অধ্যাদেশ (এমএসও) ১৯৮৩’ অনুযায়ী পরিচালিত হয়।

আর এ আইন প্রয়োগ করে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের (Department of Shipping- DoS) অঙ্গ সংস্থা ‘নৌ বাণিজ্য দপ্তর’ (Marcentile Marine Office- MMO)| সুতরাং সমুদ্রগামী নৌবাণিজ্যের প্রসারে এই সংস্থার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে সমুদ্র ও উপকূলগামী জাহাজ চলাচল ব্যবস্থা তদারকি ও নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ হলেও প্রশাসনিক দুর্বলতা, জনবল সংকট ও নিকটঅতীতে নৌ মন্ত্রণালয়ের অদূরদর্শীতায় সংস্থাটি দুর্বল হয়ে পড়েছে।

নৌ বাণিজ্য দপ্তরের কার্যক্রম মূলত সমুদ্রবন্দরকেন্দ্রীক হওয়ায় এর প্রধান কার্যালয় চট্টগ্রামে; যার অধীনে খুলনায় আরেকটি দপ্তর রয়েছে। এই সংস্থার প্রধান কাজ সমুদ্রগামী ও উপকূলীয় জলসীমায় চলাচলকারী সব ধরনের নৌযানের নিবন্ধন প্রদান, বার্ষিক সার্ভে (ফিটনেস পরীক্ষা), ডকইয়ার্ডে নতুন জাহাজ নির্মাণ ও পুরানা জাহাজ মেরামত কাজ পরিদর্শন এবং তদারকি। এছাড়া চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরে প্রবেশ কিংবা বন্দর ত্যাগের আগে জাহাজগুলো পরীক্ষা করে অনাপত্তিপত্র (এনওসি) দেয়াও এই সংস্থার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। প্রসঙ্গত, ‘এনওসি’ ছাড়া কোনো জাহাজ বন্দরে প্রবেশ কিংবা বন্দর ত্যাগ করতে পারে না।

বর্তমানে নৌ বাণিজ্য দপ্তরের অধীনে নিবন্ধিত নৌযানের সংখ্যা ৩,৭৫৫। এর মধ্যে সমুদ্রগামী জাহাজ ৪২, কোস্টাল জাহাজ ও অয়েলট্যাংকার (তেলবাহী জাহাজ) ৩৫, ফিশিং ট্রলার ১৭০, ফিশিং বোট ও কার্গোজাহাজ ৩,৫০০ এবং যাত্রীবাহী জাহাজ (সী-ট্রাক) ৮টি। (সূত্র : জেনারেল শিপিং স্ট্যাটিস্টিকস, নৌ পরিবহন অধিদপ্তর)। এতোসংখ্যক নৌযান থাকলেও সংস্থার জনবল কাঠামোতে প্রধান কার্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ার এ্যান্ড শিপ সার্ভেয়ার এবং নটিক্যাল সার্ভেয়ার- এর একটি করে পদ রয়েছে। খুলনায়ও রয়েছে সমসংখ্যক একই পদ। তবে চট্টগ্রামে দুটি পদে দু’জন কর্মকর্তা থাকলেও খুলনার পদ দুটি ১০ বছর শূন্য রয়েছে।

অর্থাৎ মাত্র দু’জন বিশেষজ্ঞর ওপর বিপুলসংখ্যক নৌযান সার্ভে এবং চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের জাহাজগুলোর এনওসি দেয়ার দায়িত্ব ন্যস্ত। এছাড়া নৌ বাণিজ্য দপ্তরের মূখ্য কর্মকর্তার (প্রধান নির্বাহী) দীর্ঘদিনের  অসুস্থতার কারণে মারাত্মক প্রশাসনিক দুর্বলতাও সৃষ্টি হয়েছে।

নিবন্ধিত ৩,৭৫৫টি নৌযান সার্ভের জন্য বর্তমানে মাত্র দু’জন কর্মকর্তা থাকলেও পাঁচ বছর আগে ছিলেন মাত্র একজন। যে কারণে নৌ মন্ত্রণালয় ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউটের (এনএমআই) এক কর্মকর্তাকে সেখানে খন্ডকালীন ‘ইঞ্জিনিয়ার এ্যান্ড শিপ সার্ভেয়ার’ হিসেবে সংযুক্তিতে পদায়ন দিয়েছিল (সূত্র: নৌ বাণিজ্য দপ্তর)। যদিও এভাবে পদায়নের বিধান নেই। এছাড়া সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে ইতোমধ্যে একজন ‘ইঞ্জিনিয়ার এ্যান্ড শিপ সার্ভেয়ার’ নিয়োগ দেয়া হলেও অজ্ঞাত কারণে এনএমআই কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়নি।

মংলা বন্দরের জাহাজগুলোর এনওসি দেয়ার জন্য নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের একজন নটিক্যাল সার্ভেয়ার ২০০৫-২০০৮ সাল পর্যন্ত খুলনায় নৌ বাণিজ্য দপ্তরে কর্মরত ছিলেন। নৌ মন্ত্রণালয় তাঁকে ২০০৯ সালে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের চিফ নটিক্যাল সার্ভেয়ারের (সিএনএস) চলতি দায়িত্ব দেয়। এরপর থেকে খুলনা কার্যালয়ে পদটি শূন্য। মংলা বন্দরের জাহাজগুলোকে এনওসি দেয়ার জন্য চট্টগ্রাম কার্যালয়ের একমাত্র নটিক্যাল সার্ভেয়ারকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হলেও তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের জাহাজগুলোর এনওসি দিতেই হিমশিম খান।

এছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মংলা বন্দরে জাহাজের আগমন বেড়েছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে বিদেশি জাহাজ এসেছিল ২৮২টি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ সংখ্যা বেড়ে হয় ৬২৩। আর গত অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৭৮৪টি জাহাজ আসে বন্দরে (সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন, তারিখ : ২১.০১.২০১৯ ইং)। তাই চট্টগ্রামের কর্মকর্তার পক্ষে নিয়মিত খুলনা ও মংলায় যাতায়াত এবং জাহাজগুলো পরীক্ষা করে এনওসি দেয়া আদৌ সম্ভব কিনা, তা নিয়েও জোরালো প্রশ্ন রয়েছে।

এদিকে জনবল সংকটের কারণে নৌ বাণিজ্য দপ্তরের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। এই সুযোগে সেখানে ভর করেছে একটি দুষ্টচক্র; যাদের প্রভাবে সংস্থার কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারিও নানা অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় জড়িয়ে পড়েছেন। এতে নৌযানের বার্ষিক সার্ভে ও নতুন নৌযান নিবন্ধনে মালিকরা নানা রকম হয়রানির শিকার হচ্ছেন। যথাযথভাবে সার্ভে না হওয়ায় নৌ দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে, সার্ভে-নিবন্ধনে ভোগান্তি ও অতিরিক্ত অর্থব্যয়ের কারণে মালিকেরা নতুন জাহাজ ক্রয়  কিংবা তৈরিতে আগ্রহ হারাচ্ছেন। বিষয়টি জানার পর দুনীতি দমন কমিশন ইতোমধ্যে মূখ্য কর্মকর্তার কাছে তদন্ত প্রতিবেদন চেয়ে পাঠিয়েছে।

এমনই অবস্থায় মূখ্য কর্মকর্তা আগামি ২৮ ফেব্রুয়ারি অবসরে যাচ্ছেন। নিয়োগ বিধি অনুযায়ী, সংস্থার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা শূন্যস্থান পূরণ করবেন এবং এ ধরনের উপযুক্ত কর্মকর্তা সেখানে আছেন। তবে শূন্য পদে ভিন্ন সংস্থার কাউকে আনা হলে পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন হবে না; বরং বিরাজমান অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা বেড়ে আশঙ্কা রয়েছে। কারণ নতুন কর্মস্থলের কার্যক্রম সম্পর্কে তাঁর বাস্তব অভিজ্ঞতা না থাকায় অসাধু চক্র বেশি তৎপর হয়ে উঠবে।

এতে অনিয়ম-দুর্নীতির সুযোগ আরো বেড়ে যাবে। যেহেতু নৌ বাণিজ্য দপ্তরের মূল সমস্যা জনবল সংকট, সেহেতু জনবল কাঠামো সংশোধন করে কর্মকর্তা-কর্মচারির পদসংখ্যা বৃদ্ধিই এর একমাত্র সমাধান; যা নৌ মন্ত্রণালয় গত ১০ বছরে করেনি। এমনকি খুলনার শূন্যপদ দুটি পূরণ করা অতি জরুরি হলেও পিএসসির মাধ্যমে তাও করেনি মন্ত্রণালয়; করলে বিধিবহির্ভুতভাবে খন্ডকালীন শিপ সার্ভেয়ার নিয়োগের প্রয়োজন হতো না।

পরিশেষে বলতে চাই, অভ্যন্তরীণ ও সমুদ্রগামী- উভয় ধরনের নৌ পরিবহন ব্যবস্থা ও নৌবানিজ্যের প্রসারে বর্তমান সরকার, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী নিজেই খুব আন্তরিক। তাই নৌবাণিজ্য দপ্তরকে ঢেলে সাজানো এখন সময়ের দাবি। আর এ কাজটি করতে হবে সংস্থার নিজস্ব দক্ষ জনবল বাড়িয়ে। তাহলেই এর কাজে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও গতিশীলতা ফিরে আসবে। নৌ মন্ত্রণালয়ের নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী তাঁর রাজনৈতিক মেধা, মনন, দক্ষতা ও সততা বলে এমন পদক্ষেপ নেবেন- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়