মহিব আল হাসান : ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি “গরিবের ছেলে বড়লোকের মেয়ে” সিনেমার শুটিং করতে খুব সকালেই এফডিসিতে এসেছিলেন চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস। সকালে এসেছিলেন অপু নায়ক মান্নার ১৬ তারিখে শেষবারের কথা মতো। কিন্তু সকালে শুটিং সেটে এসে ঘন্টার পর ঘন্টা শুটিংয়ের পোশাক পড়ে থাকলেও মান্না আর আসেননি।
এ বিষয়ে স্মৃতিচারণ করে অপু বলেন,‘২০০৮ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি, এফডিসির ঝর্না স্পটে “গরিবের ছেলে বড়লোকের মেয়ে” ছবিতে আমাদের বাসার একটা সিক্যুয়েন্সের শুটিং চলছিল। শটটা ছিলো এমন আমি মান্না ভায়ের সাথে দেখা করতে এসেছি, আমার বাবা আমাকে টেনে নিয়ে যাবে। আমি যাকে ভালোবাসি (মান্না ভাই) সে সিএনজিচালক, এটা আমার আমার বাবা কিছুতেই মেনে নিবে না।
শুটিং শেষ হলে মান্না ভাই আমাকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে মাথায় হাত রেখে দোওয়া করে দেন। বলেন তুই অনেক বড় অভিনেত্রী হবি। তারপর এও বলেন, ‘দেখ এই দুনিয়াতে মানুষ তো আর চিরদিন বেঁচে থাকে না। আমি তোকে দোয়া করে গেলাম, তুই অনেক বড় অভিনেত্রী হবি। আর বড় অভিনেত্রী তো অনেকেই হয়, কিন্তু তুই মনে রাখার মতো বড় অভিনেত্রী হবি। আমার কেন জানি মনে হলো তোকে দোয়া করে যাই।’
তারপর মান্না ভাই আমাকে বললেন তুই কাল সকাল সকাল আসবি। তোর সাথে সিক্যুয়েন্সের কাজ শেষ করে আমি বাহিরে যাবো। কারণ আমার অন্য একটি কাজ আছে। ১০টায় তুই মেকআপ, গেটআপ নিয়ে ক্যামেরার সামনে থাকবি।”
পরের দিন আমি মান্না ভাইয়ের কথামতো সকালে এসে এক নম্বর মেকআপ রুমে বধু সেজে বসে আছি। কারণ সিকুয়েন্সটা ছিলো এমন, আমি বধু সেজে থাকব বাড়িতে, সেখানে মান্না ভাই এসে আমাকে নিয়ে যাবে। রেডি হয়ে সেই যে বসে আছি, কিন্তু মান্না ভাইয়ের কোনো খবর নেই। সকাল ১০টা বাজে ১১টা বাজে তার কোনও খবর নেই। ১২টার দিকে একজন এসে বলে মান্না ভাই অসুস্থ। আমি তখন মনে করলাম দেরি হচ্ছে, এ জন্য মিথ্যা বলছে, আমি ভাবলাম মান্না ভাই তো! একটু দেরী হলে সমস্যা নেই। তারপরও অনেক সময় পার হলেও তার কোনও খবর নেই। কারো কোনও খবর না পেয়ে আমি পরিচালক সমিতিতে গিয়ে টিভিতে দেখতে পাই ব্রেকিং নিউজ যাচ্ছে যে নায়ক মান্নার অকাল প্রয়াণ। তা দেখে নিজেকে সামলে নিতে পারছিলাম না।
টিভির ব্রেকিং নিউজ দেখে আমার কানে বাজতে লাগে গতদিনের ঘটনার কথাগুলো। যে তোর সাথে তো তেমন কাজ করা হয়নি। আমি তোকে দোয়া করে গেলাম অনেক বড় অভিনেত্রী হবি। আমার কেন জানি মনে হয়েছে আমি তোকে দোয়া করে যাই, মানুষ তো সারা জীবন বাঁচে না।’
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আকস্মিকভাবে মুত্যুবরণ করেন রাজধানীর ইনাইটেড হাসপাতালে।
আপনার মতামত লিখুন :