শিরোনাম
◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে ১০ বছর আগে যা বলেছিলেন নরেন্দ্র মোদি ◈ জামায়াত কাদের সঙ্গে জোট করবে, জানালেন সেক্রেটারি গোলাম পরোয়ার ◈ ৫৩ বছর দেখেছি, আমরা আরও দু-এক বছর ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে দেখতে চাই:  নুরুল হক (ভিডিও) ◈ নবীনগরে বিপনী মার্কেটে আগুন, পুড়ে ছাই ১২ দোকান ◈ ‘ওরেশনিক’ রাশিয়ার নতুন ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে যা জানা গেল ◈ ফেসবুকে দাবি ‘মুগ্ধ ও স্নিগ্ধ একই ব্যক্তি’, যা বলছে ফ্যাক্ট চেক ◈ মাগুরায় উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি গ্রেপ্তার ◈ জয়নাল থেকে বনে গেছেন ডা.আরিফ, নেই কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা (ভিডিও) ◈ গুমের বিচার ও গুম বিলুপ্ত করা আমাদের টপ প্রায়োরিটি : প্রেস সচিব ◈ ঢাকা মহানগরীতে মহাদুর্ভোগ

প্রকাশিত : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০২:০৭ রাত
আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০২:০৭ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিটিভি তুমি কার?

অসীম সাহা : বাংলাদেশ টেলিভিশন মানে বিটিভি আসলে কার? সরকারের, জনগণের নাকি যিনি বিটিভির প্রধান কর্মকর্তা নাকি তাদের চ্যালাচামুন্ডাদের? বহু বছর ধরেই বিটিভি সম্পর্কে মানুষের অভিযোগ, এটি দলীয় সরকারের মাইক্রোফোন! সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের প্রচার-প্রচারণাই এর কাজ। পাকিস্তান আমলে যখন এই টিভির প্রতিষ্ঠা, তখন থেকেই এটা সরকারি মুখপাত্রের কাজ করে আসছে। তার ব্যতিক্রম আজো হয়নি। সেটা না হয় হোক, কিন্তু বিভিন্ন প্রচারণামূলক কাজের বাইরে বিটিভি নানা ধরনের অনুষ্ঠান করে থাকে। সে-সব অনুষ্ঠানের মধ্যে সঙ্গীতানুষ্ঠান ছাড়াও আরো বহু ধরনের অনুষ্ঠান হয়, যার মধ্যে অনেকগুলোই বেশ আকর্ষণীয় ও প্রয়োজনীয়। কিন্তু বেশ কিছু অনুষ্ঠান আছে, যেগুলোর পরিকল্পনা ও উপস্থাপনা কারা করে জানি না, তবে তা শুধু নিম্নমানের নয়, নিকৃষ্টও। প্রত্যেকটি অনুষ্ঠানের জন্য একেকজন প্রযোজক থাকেন। তাদের অধিকাংশই আসেন ক্যাডার সার্ভিস থেকে। তাদের না আছে টেলিভিশন সম্পর্কে ধারণা, না আছে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান। কিন্তু তাদের বাহাদুরির ধরন দেখলে মনে হয়, দর্শক সব গাধা। বিশেষত বিশেষ বিশেষ জাতীয় দিনগুলোতে তারা যেসব বিশেষ অনুষ্ঠান করে থাকেন, সেখানে যারা উপস্থিত হন, তাদের দেখলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরও ভিরমি খাওয়ার কথা। কবিতা বা আবৃত্তি, গান বা আলোচনা সবকিছুতেই প্রযোজকদের ইচ্ছে অথবা প্রযোজকদের মাথার উপর যারা ছড়ি ঘুরান, তাদের খেয়ালখুশি! এসব ক্ষেত্রে যাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়, তাদের মধ্যে আবার তরুণীদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি। কবিতা তো দূরের কথা, শুদ্ধ করে এক লাইন বাংলা লিখতে জানে না, তারা যখন বিটিভির বিভিন্ন অনুষ্ঠনে অংশগ্রহণ করে তার ছবি আবার মুখগ্রন্থে পোস্ট দেয়, তখন বিস্ময়ে চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। এসব কেন হয়? জানা যায়, এটা প্রযোজকদের চাহিদা : ১। সুন্দরী তন্বী-তরুণী ২। মালকড়ি। এতে সুদীর্ঘদিন ধরে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন আমাদের লালসালিপ্ত প্রযোজকগণ। আর যারা যোগ্য, তারা প্রযোজক বা তাদের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ইচ্ছেপূরণ করতে পারেন না বলে বিটিভির অনুষ্ঠানে তাদের স্থান মেলে না। বিটিভির মহাপরিচালক পদে যিনি অধিষ্ঠিত থাকেন, তিনি ব্যস্ত থাকেন মন্ত্রী বা বড় বড় আমলা-তোষণে। গত কয়েক বছরে দেখেছি, এরশাদের দালালি করেছেন এবং দলীয় ক্যাডারের মতো কাজ করেছেন, এমন আমলাকেও মহাপরিচালক হতে। এ-নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তাদের আক্রমণের শিকারও হতে হয়েছে আমাকে। আপনি যোগ্য লোকদের বিটিভিতে ডাকতে বলেন, দেখবেন, ডাকছেন না! কারণ একটাই, আপনি তাদের চাহিদামতো কিছুই সাপ্লাই দিতে পারছেন না! এগুলো বলতে গিয়ে আমাকেও শুনতে হয়েছে, আমি নাকি বিটিভিতে চান্স পাই না বলে আমার ক্ষোভ! ১৯৬৯ সাল থেকে বিটিভিতে নিয়মিত প্রোগ্রাম করছি। তা হলে আমার ক্ষোভ কিসের? কারণ আর কিছু নয়, ‘তেনারা বলেছেন’! কথা শুনে হাসবো না কাঁদবো বুঝে উঠতে পারিনি। আসলে সত্যি কথা বললেই তার মধ্যে ছিদ্র খুঁজে বের করা যাদের স্বভাব, তা বের করে তারা তাতে আঙুল ঢোকাবেই। বাংলা অভিধানে যে ‘ছিদ্রান্বেষণ’ শব্দটি চালু আছে, সম্ভবত পৃথিবীর আর কোনো ভাষার অভিধানে তা নেই। এটা বাঙালিদের জন্যই একেবারে যথার্থভাবে প্রযোজ্য। আর বিটিভির কর্মকর্তারা মনে হয়, এ-ধরনের অভিধান পকেটে নিয়েই ঘোরেন।

হাসানুল হক ইনু তথ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তারই এক অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করবার সময় বলেছিলাম, “আপনি তো বিটিভিকে জাসদের ঘুঘুর বাসায় পরিণত করেছেন!” কথাটা যে মিথ্যে বলিনি, সেটা অনেকেই স্বীকার করেছেন। কিন্তু তাতে কী? সে-কথায় কোনো কাজ হয়েছে? বিটিভির অনুষ্ঠানের মানোন্নয়নের জন্য তিনি কিছু করেছেন? করেননি।

এবার তথ্যমন্ত্রী হিশেবে ড. হাছান মাহমুদ দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তিনি ঠোঁটকাটা মানুষ। আমি বিশ্বাস করি, দীর্ঘদিন ধরে বেশকিছু প্রযোজক এবং বর্তমান সরকারবিরোধী ঘুঘুরা এখনো বিটিভিতে বহাল তবিয়তে আছেন। তাদের অবিলম্বে এখান থেকে সরিয়ে দিয়ে নতুন এবং যোগ্যদের জায়গা করে তিনি দেবেন। মাননীয় মন্ত্রী, আপনি খোঁজ নিন, গত ১০ বছরে কারা কী অনুষ্ঠান করেছেন এবং কাদের নিয়ে করেছেন? তা হলেই থলের বেড়াল বেরিয়ে আসবে! প্রয়োজন হলে আমলা-নির্ভরতা কমিয়ে সংস্কৃতি-মনস্ক মানুষদের বিটিভির দায়িত্ব দিন। দেখবেন তাতে কাজ হচ্ছে। তবে তা করতে গিয়ে আর যাই করুন, দলীয় অশিক্ষিতদের অন্তত জায়গা করে দেবেন না। তা হলে দেখবেন, সেই ‘থোড়-বড়ি খাড়া আর খাড়া বড়ি থোড়’ ছাড়া কিছুই হচ্ছে না। আপনি এমন কিছু করুন, যাতে বিটিভি প্রকৃত দর্শক এবং যোগ্য মানুষদের স্থান হয়ে উঠতে পারে।

লেখক : কবি ও সংযুক্ত সম্পাদক, দৈনিক আমাদের নতুন সময়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়