শিরোনাম
◈ সবার আগে দেশ, দেশের মানুষ, জনগণের সম্পদ : সারজিস আলম ◈ মির্জা ফখরুলের স্ট্যাটাস ঘিরে নানা ধরনের আলোচনা ◈ ঢাকায় আপাতত ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলে বাধা নেই : রিটকারির আইনজীবী (ভিডিও) ◈ জানুয়ারিতে আসছে ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল ◈ বিভিন্ন সময়ে শেখ হাসিনার মন্তব্যে ব্যাপক সমালোচনা, সত্য নিয়ে প্রশ্ন  ◈ যৌক্তিক মামলা না নিলে ১ মিনিটে সাসপেন্ড: ডিএমপি কমিশনার (ভিডিও) ◈ মোল্লা কলেজে হামলা-ভাঙচুর, রাস্তা শিক্ষার্থীদের দখলে (ভিডিও) ◈ আজও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন রিকশাচালকরা ◈ সরাসরি ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কেন আলোচনায়, এর সুবিধা-অসুবিধা কী? ◈ আওয়ামী লীগের দুই সাবেক সংসদ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন

প্রকাশিত : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১০:৫৩ দুপুর
আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১০:৫৩ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে নির্বাচনে এসেছিল বিএনপি-ঐক্যফ্রন্ট

কালের কন্ঠ :  বিএনপি একেবারে শুরু থেকেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য একটি অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘যদিও বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল, কিন্তু তারা জানত তাদের জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছিল, নির্বাচনে জয়ের কোনো সম্ভাবনা নেই, তাই তারা সব সময় নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছে।’

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাতে জার্মানির মিউনিখে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার নেওয়ার পর শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার প্রথম বিদেশ সফর করেন এবং মিউনিখে সিকিউরিটি কনফারেন্সে যোগ দেন।

গত সাধারণ নির্বাচনে বিএনপির পরাজয়ের কারণ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে মাত্র ২৮টি আসনে জিতেছে, সেই নির্বাচনের স্বীকৃতি সম্পর্কে কেউ প্রশ্ন তোলেনি। তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালের চেয়েও ভালো ফলাফলের আশা তারা কিভাবে করে? গত কয়েক বছরে ২০১৩, ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে বিএনপি রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে সারা দেশ যেসব সন্ত্রাসী তাণ্ডব চালিয়েছিল জনগণ তা ভুলে যায়নি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি পরাজয়ের বিষয়টি আঁচ করতে পেরেছিল, তারা নির্বাচনে জয়লাভের জন্য আন্তরিক ছিল না, তাই হেরেছে, এটাই বাস্তবতা। তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়া এতিমদের অর্থ আত্মসাৎ মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এবং তারেক রহমান ১০ ট্রাক অস্ত্র ও গোলাবারুদ চোরাচালান মামলার পাশাপাশি গ্রেনেড হামলা মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। সুতরাং, বড় প্রশ্ন হচ্ছে নির্বাচনে কেন মানুষ তাদের ভোট দেবে? এ ছাড়া, বিএনপি তাদের দলীয় নির্বাচনী প্রতীক ধানের শীষে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীকে প্রার্থী হিসেবে ভোট করতে দেওয়ায় জনসমর্থন হারিয়েছে এবং এটিও তাদের পরাজয়ের জন্য অন্যতম প্রধান কারণ।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি জনগণের কাছে এটি স্পষ্ট করতে পারেনি যে তারা নির্বাচনে বিজয়ী হলে কে হবেন প্রধানমন্ত্রী, কে সরকার গঠন করবেন। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবির জন্য অন্যতম কারণ হিসেবে মনোনয়ন বাণিজ্যকে দায়ী করে বলেন, বিএনপি প্রতিটি আসনে অন্তত তিনজন অথবা আরো বেশি প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করার বদলে নির্বাচনী প্রচারণায় বিএনপি আওয়ামী লীগের সমালোচনায় ব্যস্ত ছিল বেশি। তবে জনগণ ভালো করেই জানে আওয়ামী লীগ জনগণকে কী দিতে পারে।

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণকে উন্নত জীবন দিয়েছে। আওয়ামী লীগের শাসনকালে জনগণের মাসিক আয় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তারা শান্তিতে বসবাস করছে। তাদের জীবনযাত্রার মান দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, জনগণ তাও বুঝতে পেরেছে। আমরা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাকে গুরুত্ব দিয়েছি, ভবিষ্যতে আমাদের দেশকে কিভাবে দেখতে চাই সেই বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দিয়েছি। আমাদের অতীতের উন্নয়ন জনগণের কাছে যথেষ্ট দৃশ্যমান এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে তুলে ধরেছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা এনেছে এবং মাতৃভাষার কথা বলার জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে, কেউ এই অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে পারবে না। আওয়ামী লীগ এখন দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, এখন বিএনপি এবং তাদের মিত্র ঐক্যফ্রন্ট ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা চালাচ্ছে এবং দেশের সাত জায়গায় মামলা করেছে। আইন অনুযায়ী তারা নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে পারে এবং এতে আওয়ামী লীগের কোনো আপত্তি থাকবে না।

জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ইমতিয়াজ আহমেদের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, সর্ব ইউরোপীয় আওয়ামী লীগ সভাপতি অনিল দাশগুপ্ত এবং আওয়ামী লীগ ইউকে চ্যাপ্টারের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ। ইউরোপিয়ান দেশগুলোর বিভিন্ন চ্যাপ্টারের আওয়ামী লীগ নেতারা ফুলের তোড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান।

অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, যুক্তরাজ্য, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, গ্রিস, হাঙ্গেরি, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, পর্তুগাল, রাশিয়া, স্পেন, সুইডেন, স্কটল্যান্ড, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ডের আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মী প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাতে মিউনিখে আসেন।

স্বাস্থ্য সুরক্ষায় চাই অর্থায়নের নিশ্চয়তা : উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে অর্থায়নের নিশ্চয়তা জরুরি বলে মন্তব্য করে এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গতকাল শুক্রবার মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে ‘সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিস অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ’ এবং ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (ডাব্লিউএইচও) আয়োজিত ‘হেলথ ইন ক্রাইসিস—ডাব্লিউএইচও কেয়ার্স’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ইবোলা, কলেরা, যক্ষ্মার মতো সংক্রামক রোগের মহামারি থেকে বিশ্ব এখনো মুক্ত হতে পারেনি। এটাই প্রমাণ করে যে বিশ্বের বর্তমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আরো আধুনিকায়ন ও রূপান্তর প্রয়োজন। বিভিন্ন সময় দেখা গেছে, সংকটের ভয়াবহতা এবং সম্পদ ও সামর্থ্যের অপ্রতুলতার কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সঠিক পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। সুতরাং স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য অর্থায়নের নিশ্চয়তা খুবই জরুরি।

নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মতো কঙ্গো, নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান, ইয়েমেনসহ বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের পাশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেভাবে দাঁড়িয়েছে তার প্রশংসা করেন শেখ হাসিনা। এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনসহ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে বিভিন্নভাবে সহযোগিতার জন্য তিনি ডাব্লিউএইচওর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশে শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা, টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন, এইচআইভি প্রতিরোধ, ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মাসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেভাবে সহযোগিতা দিয়ে গেছে, সে কথাও আলোচনায় তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্যের বিষয়টি সীমান্ত আর নির্দিষ্ট মাত্রার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গেলে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে অঙ্গীকার যেমন জরুরি, তেমনি দরকার নিবিড় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা। এ বিষয়ে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে এখনকার উন্নত প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন আমাদের পিছিয়ে পড়া, অসহায়, অরক্ষিত জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে।

মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দিলেন প্রধানমন্ত্রী : মানব নিরাপত্তার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনার লক্ষ্যে বায়েরিশের হফে হোটেলে গতকাল শুক্রবার শুরু হওয়া তিন দিনের মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে (এমএসসি-২০১৯) বিশ্বের ৪৫০ জন শীর্ষ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ও চিন্তাবিদ যোগ দিয়েছেন।

এই সম্মেলনে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরক্ষা নীতির ক্ষেত্রে সহযোগিতা তথা বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার মধ্যে সম্পর্ক খতিয়ে দেখা, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার ওপর জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করবেন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ এই সম্মেলনে আরো অংশ নিচ্ছেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল, আফগান প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আশরাফ গানি, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি, রোমানিয়ার প্রেসিডেন্ট ক্লস আইওহানিস, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেট্রো পোরোশেঙ্কো, রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামে, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল সানি এবং চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ১৯তম কংগ্রেসের সদস্য ইয়াং জিয়েচি।

রোহিঙ্গা নিপীড়ন তদন্তে আইসিসিকে স্বাগত জানালেন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংসতার ‘প্রাথমিক পরীক্ষা’র জন্য একটি টিম পাঠাতে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের (আইসিসি) সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। গতকাল মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের সাইড লাইন বৈঠকে আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি ড. ফাতু বেনসুদা সাক্ষাৎ করলে প্রধানমন্ত্রী আইসিসির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান।

বৈঠকের পর পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আগামী মার্চের শুরুতে বাংলাদেশ সফরে আসতে যাওয়া আইসিসি টিমকে নীতিগতভাবে স্বাগত জানিয়েছেন এবং এ ক্ষেত্রে তাদের সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়