আসাদুজ্জামান সম্রাট : স্বাস্থ্যখাতে অনিয়ম-দুর্নীতি সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, অস্বীকার করব না-কাজ করতে গিয়ে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি হতেই পারে। হাসপাতালে ডাক্তারের অনুপস্থিতিকেই দুর্নীতি বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। ডাক্তারের সংকটই এখন সবচেয়ে বড় সংকট। ডাক্তারের অনুপস্থিতির কারণেই অনিয়মের অভিযোগ উঠছে। দুর্নীতি প্রতিরোধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সম্প্রতি আমাদেরকে কিছু পরামর্শ দিয়েছে। সেসব পরামর্শ রাখা না রাখারবিষয় মন্ত্রণালয়ের। মন্ত্রণালয় নিজস্ব পলিসি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।তাছাড়াও আমরা চেষ্টা করছি এই খাতে যেন দুর্নীতি না হয়। বৃহস্পতিবার সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে দুটি সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম সম্পূরক প্রশ্নে বলেন, ‘স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি, অনিয়ম। কয়েকদিন আগে দুদক ২৩ জন কর্মচারীকে নোটিশ দিয়েছে। দুদক গিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দুর্নীতি রোধে কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে। এটা গায়ে লাগে। আরেকটা কমিশন গিয়ে বলবে, আর তারা বলার পর মন্ত্রণালয় দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে, এটা অপমানজনক। গত ১০ বছর ধরে এই মন্ত্রণালয়ে যে দুর্নীতি-অনিয়ম হয়েছে আপনার মন্ত্রণালয় সেই দায়ভার নেবে কিনা?’জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক উপরোক্ত জবাব দেন।
ফখরুল ইমামের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, এখন থেকে আমরা নিয়ম করেছি-প্রতি উপজেলায় ৬জন ডাক্তার হবেন এমও এবং ইএমও। এছাড়া উপজেলা হাসপাতালগুলোতে ডাক্তারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে মন্ত্রণালয়ে একটি মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। সেই সেল ইতোমধ্যে কাজও শুরু করেছে। হাসপাতালে যন্ত্রপাতি, ওষুধ সবই আছে। শুধু ডাক্তারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পারলেই আর সমস্যা থাকবে না। আর ২৩জন কর্মচারীর বিষয়ে দুদক চিঠি দিয়েছে। তারা নিম্ন শ্রেণির কর্মচারী। তাদের বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তে যারা দোষী প্রমাণিত হবেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংসদ সদস্য শাহে আলম সম্পূরক প্রশ্নে বলেন, ‘স্বাস্থ্যখাতে অনিয়ম ভয়াবহ। জাতির জন্য এটা দুর্ভাগ্যের। দেশ যেভাবে এগাচ্ছে স্বাস্থ্যখাত সেভাবে এগোচ্ছে না।’ তার প্রশ্নের জবাবে জাহিদ মালেক বলেন, হাসপাতালে ডাক্তারের অনুপস্থিতিকেই দুর্নীতি বলা হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় আমাদের ডাক্তার অনেক কম। ডব্লিউএইচও’র মানদন্ড অনুযায়ী প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য ১২ জন করে ডাক্তার থাকার কথা, সেখানে আমাদের রয়েছে মাত্র ৪ জন। আরও ১০ হাজার ডাক্তার নিয়োগের বিষয়টি চলমান রয়েছে।
সরকারি দলের হুইপ আতিউর রহমান আতিকের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, নতুন ডাক্তার নিয়োগের বিষয়টি পিএসসিতে রয়েছে। আশা করছি মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে আমরা নতুন ডাক্তার নিয়োগ দিতে পারব। আরেক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, যেসব উপজেলায় বেশি ডাক্তার রয়েছেন সেখান থেকে ডাক্তার এনে যেখানে কম আছে সেসব উপজেলায় দেওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে কয়েকদিন আগে। আশা করছি ১০-১৫ দিনের মধ্যে এর সুফল সবাই পাবেন।
ঢাকা-৪ আসনের জাতীয় পার্টির (জাপা) এমপি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, ঢাকা-৪ (শ্যামপুর-কদমতলী) নির্বাচনী এলাকার অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে একটি আধুনিক ও মানসম্মত হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। ঢাকা-৫ আসনের সরকার দলীয় সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লার প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, ঢাকা-৫(ডেমরা, সারুলিয়া) নির্বাচনী এলাকার অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে একটি আধুনিক ও মানসম্মত হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।
বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ ও রংপুর-১ আসনের জাপার এমপি মসিউর রহমান রাঙ্গার প্রশ্নের জবাবে জাহিদ মালেক সংসদকে জানান, সর্বশেষ ২০১৭ সালে ৪৩টি জেলার অন্তর্গত উপজেলাসমূহের আর্সেনিক রোগীর রেজিস্টার থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আর্সেনিক আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৮ হাজার ৮৬২ জন। ২০১২ সালের পর খানাতল্লাশির মাধ্যমে আর্সেনিক রোগ নির্ণয়ের কোনো কার্যক্রম পরিচালিত হয়নি।
মন্ত্রী জানান, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের আর্সেনিকোসিস রোগ জেলা পর্যায়ে ২০ ব্যাচে ৬০০জন চিকিৎসককে শনাকত্তকরণ ও চিকিৎসা প্রদানের সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রাম-৪ আসনের সরকার দলীয় এমপি দিদারুল আলমের এক প্রশ্নের জবাবে জাহিদ মালেক জানান, বর্তমান সরকার সবার জন্য স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। এলক্ষ্যে প্রয়োজনীয় দক্ষ চিকিৎসক তৈরি করার জন্য সরকার প্রতি জেলায় অন্তত ১টি মেডিকেল কলেজ এবং প্রতি বিভাগে ১টি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। বর্তমানে ৩৬টি সরকারি মেডকেল কলেজের মাধ্যমে প্রতি বছর ৪ হাজার ৬৮ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা সম্ভব, যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। বেসরকারি পর্যায়ে মোট ৭৫টি (সেনাবাহিনী পরিচালিত ৬টিসহ) মেডেকেল কলেজ রয়েছে। বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর মধ্যে কিছু কিছু কলেজ মান অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। সে কারণে মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং টিমের মাধ্যমে তদন্ত করে নির্ধারিত মান অর্জনে ব্যর্থ মেডিকেল কলেজগুলোর ভর্তি কার্যক্রম ইতোমধ্যে বন্ধ করা হয়েছে।
বগুড়া-৫ আসনের হাবিবুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, স্বাস্থ্য জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচির আওতাধীন হসিপিটাল সার্ভিসেস ম্যানেজমেন্টের অপরাশেনাল প্ল্যানে চলতি অর্থবছরে অ্যাম্বুলেন্স কেনার পরিকল্পনা আছে। চলতি অর্থবছরে ৭টি লাইফ সাপোর্ট কার্ডিয়াক অ্যাম্বুলেন্স এবং ২৫টি সাধারণ অ্যাম্বুলেন্স কেনা হবে। চাহিদার ভিত্তিতে প্রাপ্যতা সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে দেশের সকল হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স সরবরাহ করা হবে।
ফেনী-২ আসনের সরকার দলীয় এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারীর এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে জাহিদ মালেক সংসদকে জানান, বার্ন ইউনিটের কার্যক্রম সম্প্রসারণের লক্ষ্যে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি রোগীদের উন্নতমানের চিকিৎসা প্রদানের লক্ষ্যে সরকার ইতোমধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন স্থানে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট একটি আন্তর্জাতিক মানের শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল চালু করা হয়েছে। ভবিষ্যতে পর্যায়ক্রমে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বার্ন ইউনিটের কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :