রমজান আলী: ব্যাংকের পাশাপাশি ঋণ নানা অনিয়মসহ কয়েকটি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান চরম খারাপ অবস্থায় রয়েছে। এমন অবস্থা রয়েছে যে গ্রাহকের টাকা পর্যন্ত ফেরত দিতে পারছে না। টাকা না পেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা চেয়েছেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। এদের মধ্যে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকও।
তথ্য অনুযায়ী, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (আইএলএফএসএল) কাছে ‘বেটা ওয়ান ইনভেস্টমেন্ট লি.’ নামের এক প্রতিষ্ঠানের সুদাসলে পাওনা রয়েছে প্রায় ৬৩ লাখ টাকা। মূল টাকা ৫০ লাখ। ওই টাকা ফেরত পেতে নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এ প্রসঙ্গে বেটা ওয়ান ইনভেস্টমেন্টের কর্ণধার আতিকুজ্জামান বলেন, আইএলএফএসএলের সঙ্গে বেশ কিছুদিন চিঠি ও কথা চালাচালি হয়। তাতে খুব বেশি কাজ হয়নি। পরে ৫০ লাখ টাকা ফেরত পেতে ছয় মাস আগে চিঠি দিয়েছি বাংলাদেশ ব্যাংকে। সর্বশেষ চলতি মাসে আরও একটি ফলোআপ চিঠি দিয়েছি।
একইভাবে বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফসি) কাছে শাহীন আক্তার নামের এক গ্রাহকের সুদে আসলে পাওনা ২১ লাখ টাকা। তার মূল টাকা ১৬ লাখ।
আরো বলেন, এ টাকা না পেয়ে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অভিযোগ করেছেন। বিআইএফসির কাছে পাওনা টাকা চাইলে উল্টো ঝাড়ি মারে। তাই টাকা ফেরত পেতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা চেয়েছি।
পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের কাছে মিজানুর রহমান নামের এক গ্রাহকের পাওনা ৬ লাখ টাকা। দুটি এফডিআর করেছিলেন তিনি। টাকা ফেরত না পেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের শরণাপন্ন হন তিনি।
শুধু তিন গ্রাহক নয়, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাক ফেরত পেতে কয়েক ডজন চিঠি এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংকে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, টাকা ফেরত না দেয়ার অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
অতিমুনাফার লোভে ধরা খাওয়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের একটি রূপালী ব্যাংক। ব্যাংকটি মোট ৮টি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী আমানত রেখেছিল। এর চারটিতে রাখা আমানত সুদসহ আটকে গেছে।
এগুলো হল- বিআইএফসি, পিপলস লিজিং, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ও ফাস ফাইন্যান্স (এফএএস)। তাদের কাছে সুদসহ ব্যাংকটির পাওনা প্রায় ৩৭৪ কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংক গ্রাহকের আমানতের এ টাকা কীভাবে ফিরিয়ে আনবে বা আদৌ ফেরত পাবে কি-না তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী, রূপালী ব্যাংককে আদায় না হওয়ায় ওই টাকার বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে হবে। এতে আরও খারাপ হবে ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থা। অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন সুবিধার বিনিময়ে রূপালী ব্যাংকের এসব টাকা কয়েকটি দুর্বল আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত হিসেবে রাখা হয়।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, নন-ব্যাংক আট আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রূপালী ব্যাংক মোট ৫৩৪ কোটি টাকা স্থায়ী আমানত হিসেবে রেখেছিল, যা এখন সুদাসলে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬০০ কোটি। অর্থাৎ বিভিন্ন নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে রূপালী ব্যাংকের পাওনা প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে চার প্রতিষ্ঠানে রাখা ৩৭৪ কোটি টাকা নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিপাকে ব্যাংকটি।
পিপলস লিজিংয়ে ব্যাংকটি ১২০ কোটি টাকা আমানত রেখেছিল। এর বিপরীতে নিয়মিত সুদ মিলছে না। আর বিআইএফসিতে রাখা ৫০ কোটি টাকা সুদসহ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৭ কোটিতে। প্রতিষ্ঠানটি কোনো টাকাই দিতে পারছে না।
এ দুটি প্রতিষ্ঠানের সাধারণ গ্রাহকরাও টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। ১০০ কোটি টাকা নেয়া ফাস ফাইন্যান্সও নিয়মিত সুদ দিতে পারছে না রূপালী ব্যাংককে। একই পরিমাণ টাকা নেয়া ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের অবস্থাও প্রায় অভিন্ন। এ দুই প্রতিষ্ঠান আমানতের মেয়াদ নবায়ন করে চলছে।
আরও কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত রেখে তা ফেরত পাচ্ছে না। একটি ব্যাংক প্রিমিয়ার লিজিং ও বিআইএফসির কাছে সুদসহ প্রায় ৭০ কোটি (মূল টাকা ৬০ কোটি) টাকা পাওনা রয়েছে। এসব টাকা ফেরত পেতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা চেয়েছে ব্যাংকটি।
আপনার মতামত লিখুন :