শিরোনাম

প্রকাশিত : ০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৮:৩৬ সকাল
আপডেট : ০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৮:৩৬ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

হাইকোর্টে বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদন : এক-তৃতীয়াংশ বাসের ফিটনেস সনদ অগ্রহণযোগ্য

বণিক বার্তা : ফিটনেস সনদ গ্রহণযোগ্য নয় দেশের এক-তৃতীয়াংশ বা ৩৩ শতাংশ বাস ও মিনিবাসের। ১৪ শতাংশ ট্রাকেরও ফিটনেস সনদ অগ্রহণযোগ্য। একই অবস্থা সিএনজিচালিত অটোরিকশার। যেগুলোরও ১৮ শতাংশের ফিটনেস সনদ গ্রহণ করার মতো নয়।

যানবাহনের ফিটনেস সম্পর্কিত এসব তথ্য উঠে এসেছে যানবাহনের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক ফিটনেস জরিপ সম্পর্কিত একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদনে। হাইকোর্টের নির্দেশে গতকাল প্রতিবেদনটি দাখিল করেছে কমিটি।

যানবাহনের ফিটনেস সনদের এ বেহালের জন্য সনদ ইস্যুকারী বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষেরই (বিআরটিএ) গলদ দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ফিটনেস সনদ ইস্যু তো বিআরটিএ করে। তাহলে তাদের ইস্যু করা ফিটনেস সনদের গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না কেন? যানবাহনের ফিটনেস পরীক্ষার বদলে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির দিকে নজর বেশি দেয়ায় এমনটি হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের কথার সত্যতা বেরিয়ে এসেছে অনুসন্ধানেও। গত বছরের আগস্টে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের পর থেকে যানবাহনের ফিটনেস সনদ নেয়ার হার অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। ওই সময় প্রতি ঘণ্টায় ৮৫টির বেশি ফিটনেস সনদও ইস্যু করা হয়। অর্থাৎ একটি ফিটনেস সনদ ইস্যু করতে সময় লাগে মাত্র ৪২ সেকেন্ড।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে যানবাহনের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক ফিটনেস জরিপ করে দেখতে গত বছরের ৩১ জুলাই একটি জাতীয় ‘নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ কমিটি’ গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। গতকাল এ বিশেষজ্ঞ কমিটি একটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে। কমিটির সদস্য সচিব করা হয় বিআরটিএর সচিব আব্দুস সাত্তারকে।

গত বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৩৯টি বাস, ২২টি ট্রাক ও ২২টি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় জরিপ চালায় বিশেষজ্ঞ কমিটি। এজন্য স্থান হিসেবে বেছে নেয়া হয় গাজীপুরের চন্দ্রা, নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর, মাওয়া রোডের (মুন্সীগঞ্জ) নিমতলা ও ঢাকার বনানীকে।

সরেজমিন পরিদর্শন করে যানবাহনের বড় একটি অংশের ফিটনেস সনদের গ্রহণযোগ্যতা পাননি কমিটির সদস্যরা। ৩৯টি বাস পরিদর্শন করে ২৪টিকে ফিটনেস সনদের জন্য যোগ্য মনে করেন তারা। বাকি ১৩টি ফিটনেস সনদ পাওয়ার যোগ্য নয় বলে মত দিয়েছেন। এ হিসাবে ৩৩ শতাংশ বাসের ফিটনেস সনদ ঠিক নেই।

শুধু ফিটনেস সনদ নয়, গাড়ির ইঞ্জিন নাম্বারও ঠিকঠাক পাওয়া যায়নি। ৩৯টির মধ্যে এমন বাসের সংখ্যা ১৫। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ৩৮ শতাংশ বাসের চেসিস খারাপ। একইভাবে ৫৯ শতাংশের ইঞ্জিন, ৫৬ শতাংশের স্পিড গভর্নর সিল, ৪৪ শতাংশের গ্যাস সিলিন্ডারের মেয়াদ, ৩৬ শতাংশের মাডগার্ড ও হুইল, ৬৭ শতাংশের সিট, ৪৬ শতাংশের বাহ্যিক অবস্থা খারাপ অবস্থায় আছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বাম্পার ও অ্যাঙ্গেলের। ৯২ শতাংশ বাসেরই বাম্পার ও অ্যাঙ্গেল খারাপ অবস্থায় পেয়েছে বিশেষজ্ঞ কমিটি।

ট্রাকের ক্ষেত্রে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে চাকা। পরিদর্শনকালে ৯৫ শতাংশ ট্রাকের চাকাই খারাপ অবস্থায় পেয়েছে বিশেষজ্ঞ কমিটি। এর বাইরে ৫৫ শতাংশ ট্রাকের স্পিড গভর্নর সিল, ৯১ শতাংশের বাম্পার, ৯৫ শতাংশের অ্যাঙ্গেল, ৪১ শতাংশের লাইট-ব্রেক রয়েছে খারাপ অবস্থায়।

সিএনজিচালিত অটোরিকশার ১৮ শতাংশই ফিটনেস সনদ পাওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছে বলে উঠে এসেছে বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদনে। আরো বলা হয়েছে, ৮৬ শতাংশ অটোরিকশার বাম্পার, জরিপের অন্তর্ভুক্ত সবক’টির অ্যাঙ্গেল, ১৮ শতাংশের স্পিড মিটার ও ইনডিকেটর খারাপ অবস্থায় রয়েছে।

বিশেষজ্ঞ কমিটিতে সদস্য হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের একজন প্রতিনিধি। প্রতিবেদনে যানবাহনের ফিটনেসের যে বেহাল দশা উঠে এসেছে, সেটি দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানতে চাইলে অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মিজানুর রহমান বলেন, যেসব যানবাহনের ফিটনেস সনদ আছে, সেগুলোই পরীক্ষা করেছেন কমিটির সদস্যরা। তাতে দেখা গেছে, এগুলোর একটা বড় অংশের ফিটনেস সনদ পাওয়ার যোগ্যতাই নেই। এর পুরো দায়ভার বিআরটিএর ওপরই বর্তায়। যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও এসব যানবাহনকে ফিটনেস সনদ দিয়েছে সংস্থাটি। ঠিকমতো পরীক্ষা করা হয়নি। বিআরটিএ ফিটনেস সনদ দেয়ার ক্ষেত্রে যানবাহন পরীক্ষা-নিরীক্ষার বদলে রাজস্ব আয়কেই হয়তো বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। ফলে ফিটনেস পাওয়ার যোগ্যতা নেই, এমন অসংখ্য যানবাহন সহজেই সনদ পেয়েছে। ফিটনেসবিহীন এসব যানবাহনকে রাস্তায় সড়ক দুর্ঘটনার একটা বড় কারণ হিসেবে দেখা দিচ্ছে।

সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি প্রতিরোধ এবং সড়কে শৃঙ্খলা আনতে আনফিট বা ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ জরুরি বলে সুপারিশ করা হয়েছে হাইকোর্টে দাখিলকৃত বিআরটিএর প্রতিবেদনে। এতে আরো বলা হয়েছে, সমস্যার ব্যাপকতা ও তার মাত্রা বোঝার জন্য যানবাহনের, বিশেষ করে গণপরিবহনের ওপর বিজ্ঞানভিত্তিক সার্ভে পরিচালনা করা খুবই জরুরি। এক্ষেত্রে কোনো বিশেষায়িত গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তা করা যেতে পারে বলে মত দিয়েছে বিআরটিএ।

উল্লেখ্য, এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের নির্দেশ অনুসারে কমিটি গঠন করে বিআরটিএ। যানবাহনের ওপর জরিপ চালিয়ে তারা প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করে। গতকাল বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এ সময় রিট আবেদনকারীর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী তানভীর আহমেদ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়