শিরোনাম
◈ যাত্রাবাড়ীতে সংঘর্ষে মোল্লা কলেজের ৩ শিক্ষার্থী নিহতের দাবি কর্তৃপক্ষের ◈ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানে না যাওয়ার ব্যাখ্যা দিলেন আসিফ ◈ যাত্রাবাড়ী-ডেমরা এলাকায় ৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন ◈ বিশ্ব ১০ বছর পর প্লাস্টিক বর্জ্যের মোকাবিলায় অক্ষম হবে ◈ আখাউড়া স্হলবন্দর দিয়ে ভারতে পালাননোর চেষ্টা, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আটক ◈ আইপিএলের নিলামের প্রথম দিনে ৭২ ক্রিকেটারের পেছনে খরচ সাড়ে ৬০০ কোটি ◈ কলম্বিয়াকে হারিয়ে ফুটসাল চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা ◈ সবার আগে দেশ, দেশের মানুষ, জনগণের সম্পদ : সারজিস আলম ◈ মির্জা ফখরুলের স্ট্যাটাস ঘিরে নানা ধরনের আলোচনা ◈ ঢাকায় আপাতত ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলে বাধা নেই : রিটকারির আইনজীবী (ভিডিও)

প্রকাশিত : ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৬:৫৮ সকাল
আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৬:৫৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কাঁচপুর ব্রীজের তলায় কি হচ্ছে !!!

প্রকিউরমেন্ট বিডি: সারাটা দিন ট্রেনিং এ কেটে গেল। সকালের সেশন ছিল ক্লাশরুম ভিত্তিক আর বিকেলে ছিল ফিল্ড ভিজিট। যা সকালে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছিল তা বিকেলে মিলিয়ে দেখানোর আরেকটি প্রয়াস। কারিগরি এই ট্রেইনিং টির আয়োজক সড়ক ও জনপথ আধিদপ্তর। অংশগ্রহনকারি হিসেবে বেশিরভাগ সড়ক ও জনপথ আধিদপ্তরের প্রকৌশলীবৃন্দ। এছাড়াও ছিল এলজিইডি, বুয়েট, মীর আক্তার, আব্দুল মোনেম, পার্ল ইঞ্জিয়ারিং এন্ড কনস্ট্রাকশন, ইত্যাদি সহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠানের প্রফেশনাল নিয়ে প্রায় পঞ্চাশ জনের টিম।

কোন রকম পরিচয় পর্ব ছাড়াই একেবারে ক্লাশরুমে বসিয়ে লেকচার শুরু হয়ে গেল। কারও কারও মধ্যে অনেক উচ্ছ্বাস … তারা কিভাবে জানি সামনের দিকে। কারও উচ্ছ্বাস কিছুটা কম মনে হল … তারা যথারীতি পেছনের সারিতে। আমি কোন সারিতে সেটা না হয় ধাঁধা হয়েই থাক। তবে, অনেক উচ্ছ্বাস নিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে মনে মনে বলছিলাম … এই ছিল কপালে !!!

প্রথমেই শুরু করলেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জাপানী ডেপুটি সেকশন ম্যানেজার মাসাতাকা টানিমোটো। তিনি ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট মহাসড়কের কাঁচপুর ব্রীজটি CFRP টেকনোলজি ব্যবহার করে কিভাবে সংস্কার কাজ করা হচ্ছে তার সংক্ষেপ বিবরণ দিলেন। তারপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার CFRP টেকনোলজি নিয়ে ভাল মন্দ বোঝানোর চেষ্টা করলেন। বেচারাকে অনেক উচ্ছ্বসিত মনে হলো। এরপর ক্লাশের শুরু করলেন বুয়েটের প্রফেসর এ এফ এম সাইফুল আমীন স্যার। তিনি বলতে গেলে কোন পড়ালেখায় গেলেন না। CFRP টেকনোলজি নিয়ে তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করলেন। সবাই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনে গেল। সবশেষে কাঁচপুর ব্রিজটির সংস্কারে এই টেকনোলজি কিভাবে ব্যবহার হচ্ছে তার বিবরণ দিলেন মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান, প্রজেক্ট ম্যানেজার, কাঁচপুর ব্রিজ প্রকল্প। পুরো সেশনের ফাঁকে ফাঁকেই হাল ধরছিলেন কাঁচপুর ব্রিজ প্রকল্পের পিডি জনাব আবু সালেহ মোঃ নুরুজ্জামান স্যার।

সকালের সেশন শেষ হবার পর বিষয়টা অনুধাবন করা শুরু করলাম। CFRP অর্থ Carbon fiber reinforced polymer। এটি একটি অত্যন্ত শক্তিশালী (স্টীলের থেকে দশ গুণের বেশি শক্তিশালী) এবং টেকশই কিন্তু হালকা fiber-reinforced প্লাস্টিক যা কার্বন ফাইবার দিয়ে তৈরী। শক্তিশালী ফাইবার পরিবারের এক অনন্য সদস্য কার্বন ফাইবার। কার্বন ফাইবারের মূল ব্যবহারসমূহ হলোঃ বিমান, রকেট, স্যাটেলাইট, অটো-মোবাইল, স্পোর্টস কার, এ্যাথলেটিক পারফরমেন্স, বিল্ডিং কাঠামো, মিউজিকাল ইন্সট্রুমেন্টে, ইত্যাদি। নির্মাণকাজে বিপ্লব নিয়ে এসেছে এই কার্বন ফাইবার।

এই CFRP টেকনোলজি নিয়ে আলোচনা করা আমার কাজ না। এর উপর অনেক লেকচার ইন্টারনেট ঘাটলেই পাওয়া যাবে। তারচেয়ে বরং ইন্টারনেটে যা পাওয়া যাবে না তাই হোক আলোচনার বিষয়।

দুটি কেস স্টাডি

২০১০ সালে রাজউক গাউছিয়া মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। এরপর সেখানে বুয়েটের একটি বিশেষজ্ঞ দল এসে ভবনটি স্ক্যান করার পরামর্শ দেয়। স্ক্যান রিপোর্ট অনুযায়ি বিশেষজ্ঞরা কলামগুলো অপেক্ষাকৃত দুর্বল বলে মত দেন। এরপর মালয়েশিয়া এবং চীনের ভবন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে পরবর্তী দুই বছরে সংস্কার কাজ করা হয়।

একশ বছরের গ্যারান্টি দেওয়া বঙ্গবন্ধু সেতুতে ২০০৬ সালে ফাটল দেখা দেয়। এরপর থেকেই কয়েকদফা সংস্কার কাজ করা হয়। সর্বশেষ কোরিয়ান এঞ্জেল কনসালটেন্ট ল্যাজারো এন্ড অ্যাসোসিয়েটসের পরামর্শে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চীনের কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি ২০১২ সালের জুনে সেতুর ফাটল মেরামত শুরু করে। এখানেও বুয়েটের টিম যুক্ত ছিল।

বুয়েটের প্রফেসর এ এফ এম সাইফুল আমীন স্যার উপরের গল্প দুটি খুব সুন্দর করে বলছিলেন। দুটি ক্ষেত্রেই CFRP টেকনোলজি ব্যবহার করে সংস্কার কাজ করা হয়েছিল। প্রথমবার CFRP শীট আনার সময় যথাযথ কর্তৃপক্ষ বুঝতে না পারায় তা প্রায় আট মাস বন্দরে কাষ্টমস ক্লিয়ারিং এর জন্য আটকে ছিল। বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে দেন দরবার করার পর তা বিনা শুল্কে বুয়েটের অনুকুলে ছাড়পত্র দেয়া হয়। গাউছিয়া মার্কেট retrofitting এ CFRP শীট ব্যবহারে জন্য অনেক গবেষণার পর ACI code revise করে অতঃপর আমাদের দেশের উপযোগি করে এর coefficients নির্ণয় করা হয়েছিল। এই অভিজ্ঞতা পরবর্তিতে বিভিন্ন জার্নালেও প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশের নির্মান কাজে যে ধরনের পাথর ব্যবহৃত হয় তা অনেক নরম প্রকৃতির। ফলে অল্প লোডেই ফুলে যায়। আর এতেই CFRP শীট ব্যবহারে উপকারিতা বেড়ে যায়। এভাবে local technology এর সাথে ইনোভেটিভ আইডিয়ার সংমৃশ্রনে বাংলাদেশে CFRP টেকনোলজি ব্যবহারের অনেক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

অবশেষে কাঁচপুর ব্রীজের তলায়

বিকেলের সেশনটি ছিল বলতে গেলে অনেকটা হাতে কলমে। Seeing is believing …. দেখে দেখে শিখি। গাড়ি চলা অবস্থায় একটি জলজ্যান্ত ব্রীজের নিচে সংস্কার কাজ চলছে … অদ্ভুত। দেশের ইঞ্জিনিয়ারাও কাজ করছে। দায়িত্বরত বাংলাদেশি এবং জাপানি টিমের সদস্যরা আমাদের প্রত্যেককেই একেবার হাতে কলমে CFRP শীট ব্যবহার করে কিভাবে সংস্কার কার্যক্রম করা হচ্ছে তা দেখালেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়