জিল্লুর রহমান, (বাগমারা) রাজশাহী : রাজশাহী-৪(বাগমারা) আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক মঙ্গলবার রাতে একাদশ জাতীয় সংসদে প্রথম অধিবেশনে মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এর ১৫৮ পৃষ্ঠার ঐতিহাসিক ভাষণের উপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় বক্তৃতাকালে বলেন, জাতির জনকের কন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। জাতির জনকের কন্যা বাংলাদেশকে বিশ্বে উচ্চ আসরে পরিচিতি করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। রাষ্ট্রপতির ভাষণে দেশের উন্নয়নের চিত্র ফুটে উঠেছে।
এনামুল হক বর্তমান সরকারের সময়ে দেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন হয়েছে। এছাড়াও এ সরকারের মেয়াদে দেশের বেশির ভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই বাগমারার শতভাগ বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সেই সঙ্গে তৃতীয় বারের মতো তাঁকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করায় বাগমারাবাসীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
দেশের প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নের দিক উল্লেখ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু সেটেলাইট উৎখেপনসহ গ্রামাঞ্চলে ডিজিটাল বাংলাদেশের ছোঁয়া লেগেছে। এখন গ্রামের লোকজন বাড়িতে বসে চাকরির আবেদন, বিদ্যুৎ বিল পরিশোধসহ বিভিন্ন ধরণের কাজ করতে পারছে। আইটি সেক্টরে সরকার সফল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তর হয়েছে। সারা বিশ্বকে তাকলাগিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেকে উন্নয়নের রুল মডেল হিসাবে দাঁড় করিয়েছেন। এছাড়া সারা বাংলাদেশে বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে।
তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে যাচ্ছে। তিনি মাতৃত্বকালীন ভাতাসহ বিভিন্ন ভাতার চালু করে প্রায় ৬২ হাজার মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
এনামুল হক আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বাগমারা ও উত্তরাঞ্চলের উন্নয়নের বিভিন্ন তুলে ধরে বলেছেন, এসরকারের সময়ে দুই শত ৫০ কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণ করা হয়েছে । এছাড়া শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সকল ক্ষেত্রে ব্যপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।
সাংসদ বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সমালোচনা করে বলেন, তারা বাংলা ভাই নামক দানব তৈরি করে আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের লোকজনকে উল্টো করে ঝুলিয়ে মেরেছে। তবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আর কোনো হত্যাযজ্ঞ নেই। কোনো রাজনীতিক হত্যাকা-ও সংঘটিত হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার বাগমারাকে শান্তির জনপদে পরিণত করেছে।
তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনার সরকারের জন্যই এই উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। তিনি শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রের বিভিন্ন উন্নয়নের দিক উল্লেখ করে বলেছেন ।
তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চারনেতা ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণ করে তিনি বক্তব্য শুরু করেন। সাংসদ রাষ্ট্রপতির দীর্ঘ ভাষণকে মাইল ফলক হিসাবে উল্লেখ করে বলেন, এই বয়সেও তিনি যে দীর্ঘ বক্তব্য দিয়েছেন তা প্রশংসার দাবিদার। তাঁর ভাষণের মধ্য দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার দেশের সার্বিক উন্নয়নের চিত্র ফুটে উঠেছে।
সংসদ সদস্য শিক্ষা বিভাগের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, এ সরকারের আমলে বাগমারায় এক শত ছয়টি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারী করন, তিনটি ডিগ্রি কলেজ এবং দুইটি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে রূপান্তর করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, বর্তমান সরকারের সময়ে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের হার কমেছে।
এনামুল হক কৃষি ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের সাফল্য তুলে ধরে বলেন, এ সময়ে কৃষির ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। কৃষিপণ্য উৎপাদন বেড়েছে। দেশের চাহিদা মেটানোর পর বিদেশে রপ্তানী করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হয়েছে।
সাংসদ এনামুল হক বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি সংরক্ষণ করার জন্য বাগমারায় অত্যাধুনিক বঙ্গবন্ধু স্মৃতিযাদুঘর কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছে, যা মাননীয় প্রধান মন্ত্রী উদ্বোধন করেছেন এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতি ইতিমধ্যে এ কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেছেন। এলাকার তরুণ সমাজ স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ সর্ম্পকে জানতে পারছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে উঠছে তরুণ সমাজ।
এনামূল হক বাগমারা ছাড়াও জেলার উন্নয়নেরও দাবি জানিয়েছেন। বক্তৃতায় তিনি হযরত শাহমখমুদ বিমান বন্দরকে আর্ন্তজাতিক মানের বিমান বন্দরে উন্নীত এবং কার্গোসার্ভিস চালুর দাবি জানান। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতু স্থাপনের ফলে উত্তরাঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছে। স্বতন্ত্র রেল সেতু স্থাপন করা হলে ব্যবসা বাণিজের আরও প্রসার এবং সুবিধা হবে। এছাড়া উত্তারাঞ্চল কে পৃথক শিল্প নীতি করারও দাবী জানান তিনি।
এনামুল হক রাজশাহী অঞ্চলকে কৃষি প্রধান অঞ্চল হিসাবে উল্লেখ করে বলেন, হযরত শাহমখমুদ বিমান বন্দরে কার্গো সার্ভিস চালু করা হলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পন্য দেশের বাইরে পাঠিয়ে ভালো দাম পাবেন।
সাংসদ এনামুল হক বাগমারা সদরে ভবানীগঞ্জ পৌরসভাকে প্রথম শ্রেনীর পেীরসভা ঘোষণা এবং নতুন ভবন স্থাপনের দাবি জানান। এছাড়া ন্যাশনাল সার্ভিস চালু, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের, কৃষি মার্কেট, সরকারী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের এবং মোহনগঞ্জের কওমি মাদ্রাসার ভবন নির্মাণের দাবি জানান মহান সংসদে ।
এছাড়াও তিনি সারাদেশের ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এমপিওভুক্ত করণের দাবি জানান।
আপনার মতামত লিখুন :