নাঈমা জাবীন : পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সিনিয়র সদস্য (সিনিয়র পদমর্যাদা) সচিব ড. শামসুল আলম বলেছেন, একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি হলো উন্নত মানবসম্পদ। মানবসম্পদ উন্নয়নের অর্থ হলো শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান ইত্যাদি ক্ষেত্রে উন্নত হওয়ার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ হওয়া, যাতে দক্ষ জনশক্তি সমাজে ও বিশ্বে তাদের অর্জিত জ্ঞানকে কাজে লাগাতে পারে। মানবসম্পদ উন্নয়নের অন্যতম উপাদান হলো কারিগরি প্রযুক্তিগত শিক্ষা।
কারিগরি শিক্ষা ছাড়া জনদক্ষতা বৃদ্ধি সম্ভব নয়। দক্ষ জনশক্তি থাকলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সহজেই আকৃষ্ট হবে। আর তাই দক্ষ জনশক্তি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন কর্মমুখী ইনস্টিটিউট ও যুগোপযোগী প্রতিষ্ঠান অবশ্য গড়ে তোলা হচ্ছে। সরকারকে মানব উন্নয়নে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখতে হবে। বিশেষত মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, গুণগত শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং প্রশিক্ষণ ও দক্ষতার উন্নয়নের মাধ্যমে জ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে তৈরি হতে হবে। দক্ষ মানবসম্পদ ছাড়া উৎপাদন বৃদ্ধি ও উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধি করা বর্তমানে একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ। শিক্ষা একটি জাতির উন্নতির মূলমন্ত্র। বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস্ ২০১৭ অনুযায়ী দেশে শিক্ষার হার বর্তমানে ৭২.৯ শতাংশ বলা হলেও এদের বিরাট অংশ কেবল নাম স্বাক্ষর করতে জানে। একে শতভাগে নিয়ে যেতে হবে। তাই শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর করে সাজাতে হবে। শিক্ষা ব্যতীত বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি জ্ঞানলাভ যন্ত্রপতি ও কলাকৌশল উদ্ভাবন ও সেগুলোর ব্যবহার সম্ভব নয়। শ্রমশক্তির ৪০ শতাংশ এখনও নিরক্ষর। সূত্র : যুগান্তর
তিনি আরও বলেন, বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী বিগত কয়েক বছর ধরে প্রবৃদ্ধি বাড়লেও সেই তুলনায় দেশে বাড়ছে না কর্মসংস্থান। ফলে বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী দেশে প্রকৃত কর্মহীন মানুষের সংখ্যা ৪ কোটি ৫৫ লাখ, যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরের ছিলো ৪ কোটি ৪০ লাখ। প্রতি বছর ২ মিলিয়ন লোক চাকরির বাজারে প্রবেশ করছে। বিশ্বব্যাংকের মতে, পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ বিশাল জনসংখ্যাকে এভাবে বেকার রেখে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভাব নয়। তাই এ কর্মক্ষম জনসংখ্যাকে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরের ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে জরুরিভাবে।
অবকাঠামো সুবিধাসহ বেসরকারি খাতকে বিভিন্ন ধরনের বাজার সুবিধা দিতে হবে যাতে তারা ব্যাপক বিনিয়োগ করতে পারে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যবসায়ীদের জন্য দেশীয় ও বিদেশি বাজার সম্পৃক্ততা কীভাবে আরও বাড়ানো যায় সে পথ ও কৌশল, আইন সহায়ক কাঠামো সরকারকেই করে দিতে হবে। ফলে বিভিন্ন খাতভিত্তিক বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠিত হলে কর্মসংস্থান বাড়বে। বাজারের মুখ্য ভ‚মিকা ও কার্যকারিতা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :