মঞ্জুর মোর্শেদ : বসন্ত মানেই শিমুল পলাশের রঙ ছড়ানো। ঋতু পরিক্রমায় বসন্ত এখনো না আসলেও নাটোরের প্রকৃতিতে বসন্তের উপস্থিতি। শহরের পলাশ গাছগুলোর রাশি রাশি ফুল জানান দিচ্ছে, মধুর ও বসন্ত আসছে। সূত্র : বাসস
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পলাশের রূপে মুগ্ধ হয়ে লিখে ছিলেন, রাঙ্গা হাসি রাশি রাশি অশোক পলাশে। বসন্তের বার্তা বাহক পলাশ ছাড়া বসন্তের কথা ভাবাই যায় না। তাই বসন্তের কবিতা আর গানে বারবার পলাশের উপস্থিতি। কবি দ্বিধান্বিত, বসন্তের পলাশ নাকি পলাশের বসন্ত ! তবে পলাশ ছাড়া বসন্ত পূর্ণতা পায় না বলে জানান নাটোর এম কে অনার্স কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক জেসমিন আরা লাকী। লাল, লালচে কমলা আর হলুদ রঙে পলাশ ফুল পাওয়া গেলেও হলুদের দেখা মেলাভার। নাটোরে চোখে পড়া প্রায় সব গাছের ফুলই লালচে কমলা রঙের।
নাটোরে এখন আর নতুন কোন পলাশ ফুলের গাছ চোখে পড়ে না। তবে পুরনো কয়েকটি স্থানে পলাশের হিরন্ময় উপস্থিতি। রাণী ভবানী রাজবাড়ী চত্বরের অফিসার্স কোয়ার্টারের সামনে সম্ভবত এ শহরের সবচেয়ে’ প্রাচীন শতবর্ষী পলাশ ফুলের গাছ। শত বছরের অধিক পুরনো এ গাছটি তিনতলা ভবনের ছাদের উচ্চতা ছাড়িয়ে ডালপালা মেলে সগর্বে দাঁড়িয়ে আছে। আকাশ ছোঁয়ার অপেক্ষায় থাকা গাছটিতে রাশি রাশি ফুল। ফুল ধরেছে ভ‚মি অফিসের পেছনের উত্তর প্রান্তের গাছটিতে। রাজবাড়ীর জলটুংগি দীঘির উত্তর প্রান্তে এখনো কোন রকম দাঁড়িয়ে আছে দু’টো পলাশ ফুলের গাছ। গাছের মুলের মাটি সরে যাওয়ায় হেলে পড়া গাছ দু’টোর ফুলগুলো যেন দীঘির পানি স্পর্শ করতে চাইছে ! ভ‚মি অফিসের গাছটি’রও একই দৃশ্য। এর আগে এ আঙ্গিনার গোপি পুকুর পাড়ের তিন প্রান্তে থাকা তিনটি পলাশ ফুলের গাছ মাটি ধ্বসে হারিয়ে গেছে পুকুরে। এ অবস্থা আর কাংখিত নয়। পুকুরে পড়ে যাওয়ার আগেই এ গাছ তিনটি রক্ষা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন নাটোরের সুধীজনরা। রাণী ভবানী রাজবাড়ী পেরিয়ে একটু উত্তরে গেলে মহারাজাজগদিন্দ্র নাথ স্কুল এন্ড কলেজের সামনে টিসিসিএ চত্বরে শোভাবর্ধন করছে আরো একটি পলাশ ফুলের গাছ। এ গাছে বর্তমানে ফুল কম থাকলেও অসংখ্য ফুলের কুঁড়ি বসন্তকে রাঙ্গিয়ে যাবে অনেক দিন ধরে।
তবে শহরের আনসার একাডেমি চত্বরের পলাশ ফুলের গাছ সেজেছে অপরূপ সাজে। গাছের প্রায় সব ফুলফুটে দ্রæতি ছড়িয়ে যাচ্ছে প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে। আগন্তকরা আসছেন এক ঝলক দেখতে। কেউ বা কুঁড়োচ্ছেন তলায় পড়ে থাকা ফুল। ফুল কুঁড়োতে কুঁড়োতে ছোট্ট সিদরাতুল মুনতাহা বললো, বাবার সাথে কয়েক বার আসলাম পলাশ ফুল চিনলাম। পলাশ ফুল এ অফিসের আঙ্গিনাকে সুশোভিত করেছে উল্লেখ করে আনসারের জেলা কমান্ড্যান্ট শাহ আহমদ ফজলে রাব্বী বলেন, আগন্তকরা ফুল দেখতে এসে মুগ্ধ হলে আমরা অভিভ‚ত হই। বসুন্ধরা সিটি সেন্টারের ডেপুটি ম্যানেজার শরীফুল আযম উজ্জল বললেন, ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে এবারের বসন্তে নাটোরে যাব পলাশ ফুল দেখাতে। প্রকৃতিতে ইদানিং দ‚র্লভ হয়ে উঠছে পলাশ ফুলের গাছ। নতুন প্রজন্মের অনেকেই পলাশ ফুলের সাথে পরিচিত নয়। কিন্ত এভাবে পলাশের বর্ণছটা ছাড়া বর্ণহীনহতে দেয়া যাবে না বসন্তকে। তাই রাণী ভবানী রাজবাড়ী চত্বরের দীঘিতে হেলে পড়া পলাশের গাছ তিনটিকে বাঁচাতেই হবে। নতুন করে শহরময় পলাশ ফুলের গাছ ছড়িয়ে দিতে হবে। এ ব্যাপারে ‘পুষ্পিতনাটোর’ কর্মস‚চির মত কোন কর্মস‚চি নিয়ে এগিয়ে আসতে পারে স্বজন সমাবেশের মত কোন সামাজিক প্রতিষ্ঠান।
নাটোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোছা. শরীফুন্নেছা বলেন, এ আঙ্গিনার পলাশ ফুলের তিনটি গাছ রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
পলাশ ফুলের চারা উৎপাদনে হর্টিকালচার সেন্টারের কোন কার্যক্রম নেই। তবে দ‚র্লভ হয়ে ওঠার আগেই এ গাছের চারা উৎপাদনে নাটোর হর্টিকালচার সেন্টার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আর এভাবেই বসন্তকে রঙ্গিন করতে পলাশের অবদান থাকবে অব্যাহত বলে আশাবাদ ব্যক্ত করলেন নাটোর হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক স.ম. মেফতাহুল বারি।
আপনার মতামত লিখুন :