আমিন মুনশি : ইসলামে মানবাধিকারের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোরআন ও হাদিসে বৃদ্ধদের প্রতি যত্ন নেয়ার বিষয়ে রয়েছে সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা। আমাদের সময় ডটকমে তার কিছু তুলে ধরা হলো, ইসলাম বৃদ্ধদের প্রতি সম্মান দেখানোর প্রতি কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেন- অর্থাৎ ‘আপনার প্রতিপালক নির্দেশ দিচ্ছেন, তোমরা কেবল তাঁরই ইবাদত করবে এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে। তোমাদের কাছে যদি তাদের কোনো একজন অথবা উভয়ই বৃদ্ধাবস্থায় পৌঁছে তাহলে তুমি তাদের ‘উহ্’ পর্যন্ত বলবে না, তাদের ধমক দেবে না। বরং তাঁদের সঙ্গে বিশেষ মর্যাদাসহকারে সম্মানজনক কথা বলবে। বিনয় ও নম্রতার বাহু তাদের জন্য সম্প্রসারিত করবে। আর এ দোয়া করতে থাকবে- ‘হে প্রভু! এদের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন, যেমন করে তারা স্নেহ-মমতাসহকারে শৈশবে আমাকে লালন-পালন করেছেন।’ (সূরা বনি ইসরাঈল : আয়াত ২৩ ও ২৪)
রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি একজন বয়োবৃদ্ধের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করবে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাকে কিয়ামতের দিন সব ভয়-ভীতি ও আশংকা থেকে নিরাপদ রাখবেন।’ হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিন বার বললেন, ধূলায় অবলুণ্ঠিত হোক তার নাক। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাস করেন, কার নাক? হে আল্লাহর রাসূল!, তিনি বললেন, সেই ব্যক্তির যে তার বৃদ্ধ পিতা-মাতার একজনকে অথবা উভয়কে পেল। অতপর তাদের খিদমত করে জান্নাত লাভ করতে পারল না। (মুসলিম)
বৃদ্ধদের শ্রদ্ধা সম্মান করা আর ছোটদের স্নেহ করা ইসলামি নৈতিকতার অন্যতম বিধান। বিশ্বের সব বৃদ্ধব্যক্তি শ্রদ্ধা ও সম্মানে অভিষিক্ত হোক, একটি পরিবারের সবচেয়ে মর্যাদাবান ব্যক্তির সম্মান পাক-এই প্রত্যাশা করা প্রত্যেক মানুষের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য।
প্রবীণদের প্রতি অবহেলা থেকে উত্তরণের উপায়
পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ন্যায় আমাদের দেশেও ব্যবসায়িক চিন্তাভাবনায় বৃদ্ধাশ্রম গড়ে ওঠার প্রবণতা অব্যাহতভাবে বেড়ে চলছে। ক্রমাগত তা বাড়তে থাকলে এ দেশের হাজার বছরের পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ, স্নেহ-প্রীতি, মায়া-মমতার বন্ধন ধ্বংস ও বিলুপ্ত হয়ে যাবে। ডেকে আনবে পশ্চিমের দেশগুলোর মতো ভোগবাদী ও হতাশাগ্রস্ত সামাজিক পরিণতি। এ থেকে উত্তরণের জন্য সচেতন হওয়া ও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার এখনই সময়। আমাদের উচিত সামাজিক দায়বদ্ধতা সম্পর্কে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে বৃদ্ধাশ্রম গড়ে তোলা থেকে বিরত থাকা। দেশে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রবীণদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়া। বিশেষ করে প্রবীণদের সম্মানে মানুষের মাঝে সচেতনা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়াগুলোতে সব সময় কার্যকর ভূমিকা রাখা একান্ত জরুরি। ব্যবসায়িকভাবে বৃদ্ধাশ্রম প্রতিষ্ঠাকে সব দিক থেকে নিরুৎসাহিত করার সঙ্গে সঙ্গে দুস্থ ও অসহায়দের সাহায্যে এগিয়ে আসা।
বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে...
আজ যারা তারুণ্যদীপ্ত উচ্ছল ঝামেলামুক্ত জীবন-যাপন করতে মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে ঠেলে দিচ্ছে। তাদের মনে রাখতে হবে কয়েক বছর পর তাদেরও একই ভাগ্য বরণ করতে হবে-সেটা আরো খারাপও হতে পারে। তাই প্রথমেই সন্তানকে উপযুক্ত শিক্ষাদানের ব্যাপারে মা-বাবাকে সচেতন হতে হবে। কারণ পরিবারই হলো সন্তানের শিক্ষার পাঠশালা। সন্তানকে প্রকৃত ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে মা-বাবাকেই প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে। আমাদের শিক্ষা কারিকুলামে সব ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পিতামাতা ও বয়স্কদের প্রতি দায়িত্ব পালনে সমাজের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ইমাম, সমাজের শিক্ষিত ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন। তবেই প্রতিষ্ঠিত হবে বৃদ্ধদের পরিপূর্ণ অধিকার।
পরিশেষে.....
সবচেয়ে বড় কথা হলো- ইসলামের শিক্ষাকে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। বিশেষ করে প্রত্যেক বৃদ্ধের ছেলে-সন্তানসহ মা-বোনদেরকেই এ কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। মুসলমানদের উচিত নিজেদের ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রবীণদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা এবং এর মাধ্যমে নিজেদের ইহ-পরকালের মুক্তির ব্যবস্থা করা। আল্লাহ তাআলা সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে প্রবীণদের প্রতি যত্ন নেয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
আপনার মতামত লিখুন :