সাত্তার আজাদ, সিলেট: সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ পরিচালক এম ইলিয়াস জানালেন, সিলেটের চুনারুঘাটের খেজুর রস আহরণের চাক্ষুস স্বাক্ষী তিনি। তার বাড়ি ওই এলাকায় হওয়াতে ছোটবেলা ট্রেনে চড়ে যেতে রাস্তারধারে সারি সারি খেজুর গাছে গাছির রস আহরণের দৃশ্য চোখে পড়ত। এখন গাছও কমে গেছে, গাছিও পেশা বদল করেছে। তাই সেখানে ঐতিহ্যের খেজুর রস ব্যবসা হারিয়ে যেতে বসেছে।
কৃষি বিভাগের ডিডির এমন কথার ছাপ রয়েছে চুনারুঘাট এলাকাজুড়ে। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে পিঠা-পায়েশের ঐতিহ্য। দিনকে দিন খেজুর গাছের সমাহারও আগের মতো চোখে পড়ে না। এজন্য এখন আর গাছিদের আগের মতো ছুটাছুটিও নেই।
চুনারুঘাট উপজেলা ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। এক সময় শীত মৌসুমের শুরুতেই গ্রামগঞ্জে খেজুরের গাছ কেটে রস সংগ্রহের জন্য গাছিরা ব্যস্ত থাকতেন। এখন আর তা দেখা যায়না। নেই সড়কের দু'পাশে খেজুর গাছের সারি।
দুইযুগ আগেও চুনারুঘাটের প্রতিটি হাট বাজারে বিক্রি হতো সুস্বাদু এই খেজুরের রস। শতি মৌসুমে আমন ধান কাটার পর গৃহবধুরা এই ধানের চাল থেকে ঢেঁকি ছুটা চালের আটা ও এই রস দিয়ে হরেক রকমের পিঠা, পায়েশ তৈরি করতেন। সেই উৎসব এখন হারিয়ে যাচ্ছে।
সিলেট কৃষি বিভাগ জানায়, আগে শীত মৌসুমে ৫০ থেকে ৬০ মন গুড় তৈরি করে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাতো একেকটি পরিবার। এখন গাছ কমে যাওয়ায় যে রস পাওয়া যায় তা দিয়ে পরিবারের সম্পূর্ণ চাহিদাই মেটানো সম্ভব হয় না। তাই পেশা বদল করছে গাছিরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, খেজুর গাছের চাহিদা ইটভাটায় বেশি হওয়ায় এবং দামও বেশি পাওয়ায় মানুষ দেদারছে খেজুর গাছগুলো বিক্রি করছে। ইটভাটার মালিকরাও অধিক মুনাফার আশায় কয়লার পরিবর্তে এই খেজুর গাছ পোড়াচ্ছেন। ফলে খেজুর গাছের সংকট দেখা দিয়েছে।
সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আলতাবুর রহমান বলেন, খেজুর রস আহরণের চেয়ে অন্য পেশা সহজ ও লাভজনক হওয়াতে অনেকেই ভিন্ন কাজে ঝুঁকে পড়েছেন। তাই খেজুর রস আহরণ ক্রমে হারিয়ে যাচ্ছে। তবে আমরা গাছিদের ঐতিহ্যের এ পেশায় ঠিকে থাকার পরামর্শ দিচ্ছি।
আপনার মতামত লিখুন :