নিউজ ডেস্ক : সারাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক উপস্থিতি শতভাগ নিশ্চিত করতে বায়োমেট্রিক হাজিরা সিস্টেম চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। বুধবার মন্ত্রণালয়ের এক জরুরি সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়।
সভা সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষার মান নিশ্চিত ও শিক্ষকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে মন্ত্রণালয়। এরমধ্যে রয়েছে, প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকদের হাজিরা বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে চালু। মাঠ লেভেলের কর্মকর্তাদের মনিটরিং জোরদার করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সভা থেকে। হঠাৎ করে স্কুলগুলো পরিদর্শনে যাবে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। কেন্দ্রীয়ভাবে মন্ত্রণালয় থেকে ই-মনিটরিং সিস্টেম চালু করা হবে। এতে করে ড্যাস বোর্ডের মাধ্যমে সারাদেশের প্রাথমিক স্কুল মনিটরিং করা হবে। প্রতিমাসে শিক্ষা কর্মকর্তারা মন্ত্রণালয়ে বিরাজমান পরিস্থিতির প্রতিবেদন পাঠাবে।
এছাড়া বায়োমেট্রিক মেশিন কেনার জন্য প্রতিটি স্কুলে চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে এই সভায়। এতে বলা হয়েছে- স্কুলের সরকারি ফান্ড থেকে স্কুল পরিচালনা কমিটি মেশিন কিনবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম-আল-হোসেন বলেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে আমরা বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। এরমধ্যে প্রধানত বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে হাজিরা চালু করার বিষয়ে আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছি আজকের (বুধবার) সভায়।’
সচিব বলেন, ‘এছাড়া ই-মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করা, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা আকস্মিক স্কুল পরিদর্শন করবে। যেসব শিক্ষক অনুপস্থিত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’
সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতিনিধি দল দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরির্দশনে যান। নির্ধারিত সময়ের আগেই অনেক বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী শূন্য দেখতে পান। খোঁজ-খবর নিয়ে তারা জানতে পারেন যে, শিক্ষকরা ইচ্ছামতো ক্লাস কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত সিলেবাস ও শিক্ষাপঞ্জি (একাডেমিক ক্যালেন্ডার) অনুসরণ করা হচ্ছে না। নির্ধারিত সময়ের আগেই সরকারি ও বেসরকারি অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি দিয়ে শিক্ষকরা বাড়ি চলে যান।
এসব সমস্যা নিরসনে শিক্ষকদের হাজিরা নিশ্চিত করে বায়োমেট্রিক হাজিরা পদ্ধতি চালুর সিদ্ধান্ত নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে ডিজিটাল মেশিনের মাধ্যমে শিক্ষকদের উপস্থিতি ও বিদ্যালয় ত্যাগের সময় রেকর্ড করা হবে।’
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ক্লাস কার্যক্রমের নতুন সময়সীমা নির্ধারণ করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
নির্দেশনা অনুযায়ী, রাজধানীর সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শীতকালীন শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে সকাল ৮টা থেকে পৌনে তিনটা পর্যন্ত। আর গ্রীষ্মকালীন সময়সূচি সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ২টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত।
আর মফস্বলে ৯টা থেকে বিকাল সোয়া ৪টা পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হতো সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে। নতুন এই নির্দেশনায় সময় বাড়ল ১৫ মিনিট।
এতে আরও বলা হয়েছে, বিদ্যালয়গুলোতে বেধে দেয়া সময় অনুযায়ী ক্লাস কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে কি-না তা উপজেলা ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষক কর্মকর্তাসহ মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা মনিটরিং করবেন। পাশাপাশি প্রতি মাসে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম-আল-হোসেন বলেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন করে ক্লাস কার্যক্রম পরিচালনায় সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন থেকে এ সময়ের আগে কোনো শিক্ষক বিদ্যালয় ত্যাগ করতে পারবে না।’তিনি বলেন, ‘বিষয়টি মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা মনিটরিং করে মাসিক প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়েছে। যদি কোনো শিক্ষক এ নির্দেশনা অমান্য করে তবে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আপনার মতামত লিখুন :