অসীম সাহা : সুলতান মোহাম্মদ মনসুর এবং মোকাব্বির খানকে নিয়ে গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী একটি বিস্ফোরক কথা বলেছেন। গণফোরামের ব্যানারে এবং ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করে আসার পর তারা সংসদ সদস্য হিশেবে শপথ নিতে চাওয়ায় তিনি এই দুর্ধর্ষ হুশিয়ারি উচ্চারণ করলেন! কী বললেন সুব্রত চৌধুরী? “স্বইচ্ছায় যদি জাতীয় বেঈমান হতে চান, তা হলে শপথ গ্রহণ করেন!” একবারে সাফ কথা। জাতীয় বেঈমান হওয়া কি চট্টিখানি কথা? তা হলে গণফোরাম দেশের ১৬ কোটি জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন আর সুব্রত চৌধুরী জাতির সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছেন, এই দুজন শপথ নিলেই তাদের জনগণ জাতীয় বেঈমান হিশেবে ঘোষণা করে দেবেন?
এ-ব্যাপারে সুব্রত চৌধুরী এতোটা নিশ্চিত হলেন কী করে? ড. কামাল হোসেনের গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি তিনি। তাকে চেনে কে? কামাল সাহেবের সঙ্গে না থাকলে তাকে কেউ পুছতো? ব্যক্তি হিশেবে দেশের মানুষ তাকে চিনতো, নাকি তার ডাকে কেউ সাড়া দিতো? তা হলে তার কণ্ঠে এতো জোর কেন? কে না জানে কণ্ঠের চেয়ে মাইক্রোফোনের জোর বেশি। যন্ত্র স্বংয়ক্রিয়ভাবে নিজের থেকে দারুণ শব্দ বের করে। আওয়াজ যায় বহুদূর পর্যন্ত। কিন্তু সুব্রত চৌধুরীকে কি মাইক্রোফোনও বলা যেতে পারে? বড়জোর তিনি গণফোরামের চোঙ্গা হিশেবে কাজ করার যোগ্যতা রাখেন। সেই মাইক্রোফোন থেকে চটগ্রামের আঞ্চলিক প্রমিত ভাষায় ‘জাতীয় বেঈমান’ ঘোষণা দিয়ে তিনি বেশ একটা কৌতুককর অবস্থা সৃষ্টি করে ফেলেছেন। সুলতান মোহম্মদ মনসুর শেখ হাসিনার সঙ্গে, বঙ্গবন্ধুর রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে জিতে এসে এখন উল্টো গান গাওয়াতে সুব্রত চৌধুরীর সবচেয়ে বেশি গায়ে লাগার কারণ কী? আর কিছু না। কারণ তিনিও ‘বিজাতীয় বেঈমান’ হিশেবে বিএনপির সঙ্গে গাঁটছাড়া বেঁধে জাতির পিতার কন্যাকে হারানোর জন্য হকুমবরদার হিশেবে কাজ করেছেন।
তিনি বেঈমানি করেছেন নিজ ধর্মের সঙ্গে, দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে এবং জাতির পিতা ও তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার সঙ্গে। তা হলে তিনি অন্যকে জাতীয় বেঈমান হওয়ার সম্ভবনা নিয়ে হুশিয়ারি দিলেন কোন চরিত্রগুণে? যিনি নিজের চরিত্রের সবটুকু বিসর্জন দিয়ে ধানের শীষে ঝুলে পড়েছেন, তিনি অন্যকে একই ধরনের কথা বলার অধিকার রাখেন? সুলতান মনসুর তো শেখ হাসিনার দয়ায় তবু ডাকসুতে একবার ভিপি হিশেবে জয়লাভ করেছেন, ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। নেত্রী যদি মনসুরকে বেঈমান হিশেবে চিহ্নিত করে হুশিয়ারি দেন, তা হলে সেটা তবু মানায়। কিন্তু সুব্রত চৌধুরী কে? চালহীন, চুলোহীন রাজনৈতিক ‘ভাদ্যাইম্যা’ যেমন ড. কামাল হোসেনের দলের কার্যকরী সভাপতি হতে পারেন না, তেমনি অন্য কাউকে ‘বেঈমান’ বলারও অধিকার রাখেন না! কিন্তু সুব্রত চৌধুরী তো গায়ে মানে না আপনি মোড়ল। তাই কথা বলেন বেশি, কাজ করেন কম। এ-জাতীয় লোকেরা সব দলে, সব স্থানে বিপজ্জনক! ড. কামাল কোন্ চিন্তা থেকে এই অজ্ঞাতকুলশীল লোকটাকে তাঁর দলের কার্যকরী সভাপতি পদে অভিষিক্ত করেছেন, তা তিনিই ভালো জানেন। তবে তিনি দেশে ফেরার আগেই যে চৌধুরী মশায় সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আর মোকাব্বির খানের দিকে বিষাক্ত তীর নিক্ষেপ করলেন, সেটা না আবার তার দিকেই বুমেরাং হয়ে যায়! যদি যায়, তা হলে তিনি তা শামাল দিতে পারবেন তো? জোট করেছিলেন বিএনপির সাথে।
যে ধানের শীষের মাথায় উঠে ডুগডুগি বাজিয়ে আর সকলের সঙ্গে নির্বাচনে জিতে বড় মাপের মন্ত্রী হবেন বলে আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে তার আলোতে গলায় ‘টাই’ বাঁধতে শুরু করেছিলেন, শেখ হাসিনা তাতে ছাই ঢেলে দেয়াতে তিনিও যে ‘বিজাতীয় বেঈমান’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে এখন ‘না ঘরকা, না ঘাটকা’ অবস্থায় আছেন, সেটা বোধহয় বোঝার শক্তিও তার নেই! আসলে পৃথিবীর কোনো ধরনের বেঈমানই নিজের পায়ের নীচ থেকে যখন মাটি সরে যায়, তখন বুঝতে পারেন না। বুঝতে পারেন তখনই, যখন ‘ধপ’ একেবারে পাতালে গিয়ে পতিত হন! সুব্রত চৌধুরীও বুঝবেন। এখনকার বিজাতীয় হালুয়ারুটি তার পেটেও বেশিদিন হজম হবে না। তখন আবার তিনি কোন্ জাতীয় ‘ঈমানি’ অবস্থায় থাকেন, সেটা দেখা জন্য আশা করি খুব বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না!
লেখক : কবি ও সংযুক্ত সম্পাদক, দৈনিক আমাদের নতুন সময়!