শিরোনাম
◈ ১০  এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা ◈ সুমাইয়াকে অধিনায়ক করে নারী অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের স্কোয়াড ঘোষণা ◈ রাজশাহীকে হারালো ঢাকা মেট্রো, রংপুর জিতলো ঢাকা বিভাগের বিরুদ্ধে ◈ বেসরকারি খাত উন্নয়নে আরও ১২০০ কোটি টাকা দেবে এডিবি ◈ এবার যে কারণে শীতের অনুভূতি বেশি হবে ◈ ১৮টি ব্যাংকের বিপদের কারণ হতে পারে শীর্ষ তিন গ্রাহক ◈ শেখ হাসিনাকে নিয়ে যে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন সাকা চৌধুরীর ছেলে! (ভিডিও) ◈ অস্ট্রেয়িার কাছে হোয়াইট ওয়াশের পর ভারতের কপালে জুটলো আইসিসির সাজাও ◈ পুলিশের যেসব নিষেধাজ্ঞা থাকছে বড়দিন ও থার্টি ফার্স্ট নাইট ঘিরে ◈ ঢাকার যেসব এলাকায় শুক্রবার গ্যাস থাকবে না

প্রকাশিত : ০১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৩:৪৮ রাত
আপডেট : ০১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৩:৪৮ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দল বদলের রাজনীতি

ড. তারেক শামসুর রেহমান, যুক্তরাষ্ট্র থেকে: অনেকগুলো নাম, এ কে খন্দকার, আবু সাইয়িদ, ড. রেজা ও সর্বশেষ গোলাম মাওলা রনি। এই নামগুলো এখন ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে গেছে। কারণ এরা সবাই একসময় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী ও এমপি হয়েছিলেন। এখন কেউ গণফোরামে যোগ দিয়েছেন। কেউ আবার বিএনপিতে। এদের সংখ্যা এখন মোটামুটি ভালোই। দল বদল করেছেন। নতুন দল তাদের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নও দিয়েছে। এই দল বদলের রাজনীতি আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এ কারণেই যে সামনে একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন। এরা কেউই মূল দল থেকে নমিনেশন না পেয়ে আশ্রয় নিয়েছেন গণফোরামে এবং বিএনপিতে।

এ ক্ষেত্রে গণফোরামের পাল্লাই ভারী। গণফোরাম এতোদিন অনেকটাই ঘুমিয়েছিলো। সাংগঠনিক তৎপরতা একদমই ছিলো না। ৬৪টি জেলায় এদের সাংগঠনিক কমিটিও নেই। কিন্তু ড. কামাল হোসেন বিএনপিকে সাথে নিয়ে ঐক্যফ্রন্ট গঠন করলেন।

মানুষের আগ্রহ বাড়লে, কামাল হোসেন তৎপর হলেন। তার বিদেশ যাওয়া কমে গেলে আর তাই রাজনীতির অতিথি পাখিরা ভীড় জমাতে শুরু করলেন গণফোরামে। ভাবখানা এই গণফোরামই হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের বিকল্প শক্তি! একসময় বিএনপি আওয়ামী লীগের বিরোধী রাজনীতির নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলো। এখন যেন সেই জায়গাটা দখল করে নিলো গণফোরাম। তাই রাজনীতির অতিথি পাখিরা তৎপর হয়েছেন। গোলাম মাওলা রনি তো স্পষ্ট করেই বলেছেন, তিনি পটুয়াখালীর একটি আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে এবং না পেয়ে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। ওই মনোনয়নও পেয়েছেন বিএনপি থেকে। তার অনেক অতীত বক্তব্য এখন ফেসবুকে ভাইরাল। যেখানে তিনি বিএনপির তথা মির্জা ফখরুল সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেছেন। মির্জা সাহেব এটা জেনে-শুনেই রনিকে দলে আশ্রয় দিলেন। প্রশ্ন হচ্ছে, এসব রাজনীতির অতিথি পাখিদের দল বদলের কারণে দল বা রাজনীতি কতোটুকু উন্নত হবে? গণফোরাম বা বিএনপি কি খুব লাভবান হবে?

নির্বাচন হবে। নির্বাচনী রাজনীতি এখন তুঙ্গে। তবে এই নির্বাচন আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে বদলে দিতে পারবে না। রাজনীতির অতিথি পাখিরা রাজনৈতিক আদর্শের জন্য নয় বরং নিজ স্বার্থ উদ্ধারের জন্যই দল ত্যাগ করে নতুন দলে যোগ দিয়েছেন।

যদি আদর্শের ব্যাপারে তারা কমিটেড থাকতেন, তাহলে তো অনেক আগেই তাদের গণফোরামের অথবা বিএনপিতে যোগ দেবার কথা। কিন্তু তারা তা করেননি।

আবু সাইয়িদ কিংবা গোলাম মাওলা রনিরা নতুন দলে গণফোরাম ও বিএনপিতে যোগ দেওয়ার দুই দিন আগেও টক-শোতে আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বলেছেন। রনির একাধিক বক্তব্য আছে টক-শোতে। যেখানে তিনি বিএনপি ও বিএনপির নেতৃবৃন্দের সমালোচনা করেছেন। এখন রনি বলছেন, আমৃত্যু বিএনপির সাথে থাকার কথা। কিন্তু নির্বাচনের পর তিনি কী বিএনপির সক্রিয় থাকবেন? ঐক্যফ্রন্ট ও মহাজোট কেন্দ্রিক রাজনীতি এখন জমে উঠেছে। ঐক্যফ্রন্ট থেকে কারা কারা মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচন করবেন তা এখন অব্দি নিশ্চিত হয়নি।

মহাজোট নিয়েও কথা আছে। মোহাজোট শেষ অব্দি টিকে থাকবে কিনা, সেটাও আলোচিত হতে থাকবে বারবার। এর বাইরে তৃতীয় একটি শক্তির উত্থানের কথা বারবার বলা হলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সে সম্ভাবনাও ঘটলো না। আবারও প্রমাণ করলো জাতীয় রাজনীতি মূলত দুভাগে বিভক্ত হয়ে আছে।

একদিকে আওয়ামী লীগ ও অন্যদিকে আওয়ামী লীগবিরোধী একটি শক্তি। এতোদিন বিএনপি আওয়ামী লীগবিরোধী শিবিরের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলো। এখন বিএনপির পরিবর্তে সেখানে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জন্ম হয়েছে একটি জোটের। যেখানে বিএনপির একক কর্তৃত্ব আর নেই। তবে রাজনীতিতে যে আস্থাহীনতা বিদ্বেষ অপর পক্ষকে সহ্য না করার যে মানসিকতা তা রয়ে গেছে। তাতে পরিবর্তন আসেনি। একটি সংলাপ হয়েছিলো বটে। তবে তার কোনো ফল বয়ে আনেনি। তবে প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে একটাই ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারির ঘটনার পুনরাবৃত্ত্বি হচ্ছে না। অর্থাৎ নির্বাচন বয়কট হচ্ছে না।

বিএনপি নির্বাচনে যাচ্ছে। সব কিছু ঠিক থাকলে আমরা একটি শক্তিশালী বিরোধী দল পাবো একাদশ জাতীয় সংসদে। এখন নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন হচ্ছে।

ব্যবসায়ী ও সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের সরকারি দলে যোগদানের হিড়িক বেড়েছে। সবাই চায় এমপি হতে! এতে করে স্থানীয় নেতৃত্ব উপেক্ষিত থাকছে। অথচ স্থানীয় পর্যায়ে এরাই দলকে টিকিয়ে রাখেন।

এখন রাজনীতির অতিথি পাখিরা যাদের সাথে স্থানীয় রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। এরাই দলের মনোনয়ন ভাগিয়ে নিচ্ছেন। এতে করে রাজনীতি উন্নত হবে না। স্থানীয় রাজনীতি বিকশিত হবে না। অর্থের জোরে, শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বের সাথে সম্পর্কের জোরে দলীয় মনোনয়ন পেলে এবং নির্বাচিত হলেও স্থানীয় রাজনীতিতে ও সাধারণ মানুষের জন্য এদের কোনো ভূমিকা থাকবে না। এরা ঢাকা কেন্দ্রিক হয়ে যাবে।

নিজেদের ব্যবসার পরিধি বাড়াবে। শুল্কমুক্ত গাড়ি ও প্লট ভাগিয়ে নেবে। রাজনীতি ধীরে ধীরে ব্যবসায়ী, অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আর সুবিধাবাদীদের কব্জায় চলে যাচ্ছে। এই রাজনীতি গণমানুষের রাজনীতি না। এই রাজনীতি দ্বারা তৃণমূল মানুষের উন্নয়নের সম্ভাবনা ক্ষীণ। তাই নির্বাচনের আগে যেভাবে শুধু মনোনয়ন না পাওয়া নিয়ে দল বদলের হিড়িক বাড়ছে তা আমাদের আশাবাদী করছে না।

লেখক : প্রফেসর ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়