বেদনার নাম চুকনগর
বিভুরঞ্জন সরকার
খুলনা জেলার ডুমুরিয়ার
একটি ছোট্ট গ্রাম চুকনগর।
ভদ্রা নদীর তীরে এই গ্রামে
প্রলয় নেমে এসেছিলো একাত্তরের এক দিন।
২০ মে, সকাল দশটা।
ঘড়ির কাঁটা তখনও সচল
হাজার হাজার মানুষের পদভারে
চুকনগরের মাটি ভারাক্রান্ত
কিন্তু প্রতিবাদহীন।
মাটিই তো মাটির মানুষের
শেষ ঠিকানা,
মাটিতেই মিশে যায় নশ্বর দেহ।
একাত্তর ছিলো মুক্তির কাল
একাত্তর ছিলো ঘাতকের সময়
একাত্তর ছিলো আলো এবং অন্ধকারের সমবেত খেলা
একাত্তর ছিলো উৎখাত ও
প্রতিষ্ঠার ঐকতান।
নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে
আপন বসত ছেড়ে,
কতো কতো দূর গ্রাম-জনপদের
শিশু-নারী-পুরুষ-বৃদ্ধ-
জোয়ান-তরুণ
ভয়ার্ত তাদের চোখ
খুঁজছিলো পালানোর পথ।
উদ্বাস্তু জীবন বেছে নিয়ে
খুঁজছিলো বাঁচার ঠিকানা।
পায়ে হেঁটে, নদী পথে
রাতের আঁধারে সমবেত হয়েছিলো
চুকনগরের নিরিবিলি শান্ত ভদ্রা তটে।
কতো ছিলো সংখ্যায় তারা?
পিঁপড়ের সার দেওয়া মানুষের
মাথা গোনা ছিলো নিষ্প্রয়োজন।
পাকিস্তানি হার্মাদ সেনারা
ট্রাক ভরে এসে ছোটায় বুলেটবৃষ্টি
অসহায় মানুষের বুকে।
বাঁচার জন্য ঘরছাড়া মানুষেরা
ঢলে পড়ে মৃত্যুর কোলে হাজারে হাজার।
মাতৃস্তনে মুখ রাখা ছ’মাসের শিশু
অসহায় তাকিয়ে দেখে রক্তে ভেজা মায়ের বুক।
হায়, মুহূর্তে জমে যায় লাশের স্তূপ
লাল রক্তের নদী সাঁতরে
পালাতে পারে না কেউ।
চুকনগর এক সঙ্গে হয়ে যায়
দশ মাইলাই।
এতো রক্ত পিপাসা যাদের
মানুষ তারা ? কি তাদের পরিচয়?
মৃত্যুর মিছিল থেকে জীবনের আয়োজন করেছে বাঙালি।
যাদের রক্তে আজ আমাদের
এই স্বাধীনতা ,
তারা আজ নাম পরিচয়হীন
স্মৃতির মিনার।
চুকনগরের স্মৃতিসৌধে
নত শিরে দাঁড়াই
বিহ্বলতা নিয়ে
কতো প্রশ্ন উড়ে আসে,
জুড়ে বসে মনে
যারা দিয়ে গেলো প্রাণ
তাদের প্রতি কি দায় আমাদের,
আমরা কি তাদের মনে রেখেছি
তাদের করছি কি বিনীত সম্মান?
আপনার মতামত লিখুন :