মহিব আল হাসান: সময়ের সাথে মানুষের পরিবর্তন হয়। কেউ তার অতীতের কাজে নিজেকে নিয়ে যান অসীম মায়ায় আবার সেই অতীতকে নিয়ে গল্প করেন পরবর্তী প্রজন্মের সাথে। একসময়ে তার চলাফেরা যেমন দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছিল ঠিক তেমনি দেশের বাহিরেও চষে বেড়িয়েছেন তিনি। কাজের প্রয়োজনে ঘুরে বেড়িয়েছি দেশ-বিদেশ। আজ অন্যের বাসায় সে গৃহবন্দি। নিজের থাকার মতো জায়গা নেই তার। স্ট্রোক করার পর দুই বছর ধরেই ঘড়ের ভিতর থেকে এখন আর বের হতে পারেন না তিনি। চিকিৎসা করানোর মতো টাকা নেই তার । সেই সময়কে বুকে ধারণ করে অঝোর নয়নে কথগুলো বলছিলেন আমাদের সময় ডট কমকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত মেকআপম্যান আবদুর রহমান।
আবদুর রহমান ১৯৬৫ সালে প্রথম চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন। তিনি প্রথম শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন ২০১০ সালে ‘মনের মানুষ’ ছবির জন্য । এরপর দ্বিতীয়বার শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান ২০১৪ সালে মাসুদ পথিক পরিচালিত সরকারি অনুদানের ছবি ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’-এর জন্য। সর্বশেষ ‘ভুবন মাঝি’ ছবিতে মেকআপম্যানের কাজ করেছেন আবদুর রহমান।
মেকআপম্যান আবদুর রহমান ‘মনের মানুষ’ ও ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’ এই ছবি দুটির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। তিনি ২০১৬ সালে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ (ব্রেইণ স্টোক) করেন। এর পর থেকে কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন তিনি। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারেননি তিনি। আর এ কারণে গৃহবন্দি জীবন ধারণ করছেন তিনি। থাকার জায়গা বলতে কিছু নেই তার। থাকছেন অন্যের বাড়িতে। অসুস্থ আবদুর রহমানের আশ্রয় এখন প্রয়াত পরিচালক তারেক মাসুদের সহকারী আলী আহসানের বাসায়।
অসুস্থ্যতা নিয়ে আব্দুর রহমান বলেন,‘ ২০১৬ সালে একটি ছবির কাজ শেষ করেছি। এরকিছুদিন পরেই আমার স্টোক হয়। কিছুদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও স্বাভাবিক না হওয়ায় আমাকে তারেক মাসুদের সহকারী আলী আহসান ভাই তাঁর বাসায় নিয়ে আসেন। তখন থেকে এখানেই আছি। আমার কোনও আত্বীয় স্বজন না থাকায় এখানেই মানবতার জীবন কাটাচ্ছি।
পরিবারে আর কে কে আছেন জানতে চাইলে আবদুর রহমান বলেন, ‘আমার কোনও পরিবার নেই। আমার কাছে কাজটা আমার পরিবার ছিল। আমার বাড়ি বিক্রমপুর, আমার মা বাবা অনেক আগে মারা গিয়েছেন। আমি বিয়ে করিনি তাই কোনও পরিবার নেই। সারাজীবন চিন্তা করেছি যে যা উপার্জন করব তা দিয়ে জীবন পার করতে পারব। কিন্তু অসুস্থ্যতা আমার সব কেড়ে নিল।
শারীরিক সমস্যা নিয়ে জানতে চাইলে আবদুর রহমান বলেন, এখন বয়স হয়েছে। অনেক কষ্টে জীবন পার হচ্ছে। কিছুদিন হলো আমি চোখে কম দেখি। আমার শরীওে হাটার শক্তি নেই তাই বিছানায় আমার সঙ্গী হয়ে আছে এখন।
আবদুর রহমানকে আশ্রয়দাতা আলী আহসান বলেন, ‘আমি গত দুবছর ধরে তাকে বাসায় নিয়ে এসে চিকিৎসা করাচ্ছি। আমি যখন বাহিরে থাকি তখন ভয়ে থাকি কখন যেন তার কি হয়। আবদুর রহমান ঘওে একা থাকলে কী যেন ভয়ে থাকে সেটা বুঝতে পারি না। আমি বাসায় তাকে নিয়ে আসলেও চিকিৎসা করতে পারি নাই। কারণ চিকিৎসা করাতে অনেক টাকা লাগে আর আমার পক্ষে এত টাকা খরচ করা ক্ষমতা নেই। আমি যে টাকা আয় করি তা দিয়ে আমার প্রতিদিনের সংসার চলে। আমি মনে করি সরকার যদি উনার পাশে একটু সহযোগিতা করেন তাহলে তার বাকি জীবনটা সুন্দর করে কাটাতে পারবেন।’
প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়ে আব্দুর রহমান বলেন,‘আমাদের সরকার অনেক দয়ালু। তিনি শিল্পীদের চিকিৎসার জন্য সবসময় পাশে দাঁড়ান। তাই আমি তার কাছে আবেদন করব তিনি যেন আমার পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।
আপনার মতামত লিখুন :