কামরুল হাসান মামুন: একটি ভিডিও দেখলাম বেশ ভাইরাল হয়েছে। সরকারি দলের এক এমপি এবং দলের কিছু নেতাকর্মী হলরুমে বসে আছে আর সামনে হলভর্তি স্কুলের ছাত্রছাত্রী। কিছুক্ষণ পর একদল ছাত্রী সারিবদ্ধভাবে হাতে ফুলের মালা নিয়ে একেকজন এমপিসহ একেক নেতার সামনে দাঁড়ালো আর গানের সাথে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদনের মত করে শ্রদ্ধা জানানোর অভিনয় করছে। পাশে স্কুলের শিক্ষককে ইন্সট্রাকশন দিতেও দেখা গেল। যখন ছাত্রীরা গানের সাথে শ্রদ্ধা জানানোর অভিনয় করছিল তখন এমপিসহ অন্যান্য নেতাদের মুখের ভাব দেখে বড় কষ্ট হচ্ছিল। বিশেষ করে ছাত্রীদের চেহারা দেখে স্পষ্ট হয়েছে যে এইসব তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে হয়েছে কারণ হয়ত করতে বাধ্য করা হয়েছে। প্রায়ই দেখা যায় স্কুলের বাচ্চাদের লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে মন্ত্রী এমপিদের স্বাগত জানানো হয়। আমি নিশ্চিত পৃথিবীর কোথাও এমন হয় না হতে পারে না।
কত নিষ্ঠূর হলে আর কতটা অশিক্ষা থাকলে পরে ক্ষমতার দাপট দেখানোর জন্য এইরকম নিষ্পাপ স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েদের দিয়ে এইরকম সম্বর্ধনা-সম্বর্ধনা খেলা খেলতে পারে ভাবা যায়? স্কুলের শিক্ষকরা হয়ত কিছু কিছু উচ্ছিষ্ঠ কিংবা একটু নেক নজর পাওয়ার জন্য এই সম্বর্ধনার আয়োজন করেছে। এইসবের মধ্যে পুরোটাই হলো বড়দের স্বার্থ হাসিল আর ক্ষমতার দাপটের খেলা। এর মধ্যে কেবলই পৈশাচিকতার গন্ধ পাওয়া যায়। আমি পুরো ভিডিওটি দেখতে পারিনি। কান্না এসে গিয়েছিল।
কিছুদিন আগে আমার কলেজের এক শিক্ষকের সাথে দেখা। তিনি বললেন কয়েকদিন আগে এলাকার এমপি সাহেবকে কলেজ থেকে একটি সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। সেই অনুষ্ঠানে দুইয়েকজন শিক্ষক উপস্থিত থাকতে পারেনি। তারজন্য কলেজের গভর্নিং বডি মিলে ওই শিক্ষকদের ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলা হয়েছে। শুনেছি কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি (যিনি আবার সরকারি দলের নেতা) যদি কলেজে আসেন তাকে প্রিন্সিপাল সাহেব অফিস থেকে বের হয়ে গেটে গিয়ে উনার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকেন। আর এমপি সাহেব আসলেতো কথাই নাই। আমরা যখন ছাত্র ছিলাম তখন দেখতাম কলেজের প্রিন্সিপালের কত সম্মান। তখন কলজ পরিচালনায় গভর্নিং বডি কেবল একটি সহায়ক কমিটি ছিল। প্রিন্সিপালই ছিলেন সর্বের সর্বা। কিভাবে যেন স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক, প্রিন্সিপাল আর ভিসিরা ক্ষমতাহীন হয়ে গেল। সব এখন নষ্টদের কব্জায় চলে গেল।
শিক্ষাকে বাঁচাতে হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে রাজনীতির খপ্পর থেকে বাঁচাতে হবে। তা নাহলে শিক্ষার মান জিন্দেগিতেও ভালো হবে না।
PS: আগামী নির্বাচনে ওই এমপি যেন মনোনয়ন না পান সেইদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর মনোনয়ন পেলে যেন জামানত বাজেয়াপ্ত হয় তার জন্য গোটা দেশের সোচ্চার হওয়া উচিত। ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে
আপনার মতামত লিখুন :