ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ : সহ-শিক্ষা পাঠক্রমিক কার্য বলতে সাধারণভাবে পুঁথিগত বিষয়ের বাইরে জ্ঞানার্জনের প্রক্রিয়াসমূহকে বোঝায়। এই প্রক্রিয়া শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশের সাথে সাথে সামগ্রিক জীবন ও সৃজনশীলতার বিকাশে পূর্ণ সহযোগিতা করে। সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলীর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। এ ধরনের কার্যাবলী শ্রেণীকক্ষের পঠন পাঠনের একঘেঁয়েমী ও অবসন্নতা দূর করে এবং সৃজনশীল প্রতিভা বিকাশে সহায়তা করে। এছাড়া ছাত্রছাত্রীদের দৃষ্টিভঙ্গির প্রসার ঘটায় ও তাদেরকে মূল্যবোধে উজ্জীবিত করে। অধিকন্তু প্রতিষ্ঠানের সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলীতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের প্রতিষ্ঠানের প্রতি আনুগত্য বৃদ্ধি পায় এবং দেশ ও সমাজ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। এর মাধ্যমে তরুণ ছেলেমেয়েরা বাস্তব জীবনের সাথে প্রত্যক্ষভাবে পরিচিত হয় এবং সহযোগিতা, সহানুভূতি ও সহমর্মিতা জাগিয়ে তোলে। সর্বোপরি সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলীর মাধ্যমে শৃঙ্খলাবোধ জাগরিত হয়, ভবিষ্যত বৃত্তি নির্বাচনে সহায়ক হয়। এমনকি প্রতিষ্ঠানের সুনাম বৃদ্ধিসহ সকলের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও সুসম্পর্ক সৃষ্টি হয় এবং তরুণ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অবসর সময়কে কাজে লাগানোর অভ্যাস গড়ে ওঠে।
শিক্ষা ব্যবস্থায় সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমান সময়ে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী এত বৈচিত্রময় যে, সব কাজের পূর্ণ তালিকা প্রকাশ করা সম্ভবপর নয়। প্রকৃতি ও উদ্দেশ্যের উপর ভিত্তি করে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীকে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। সহপাঠ কার্যক্রম হিসেবে খেলাধুলা ও শরীরচর্চার গুরুত্ব অপরিসীম। সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী হিসেবে বিদ্যালয়ে বিভিন্ন ধরণের শরীরচর্চামূলক কাজ ও ব্যায়াম করা যেতে পারে। শরীর চর্চামূলক কাজ হিসেবে দৌড়, লাফ, ঝাঁপ গৃহীত হতে পারে। এছাড়া যেসব সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী শিক্ষার্থীকে সৃজনশীল হতে সাহায্য করে, জ্ঞান ও বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়ন ঘটায় সেগুলো শিক্ষামূলক কার্যাবলীর অন্তর্গত। বিতর্ক প্রতিযোগিতা, দেয়ালিকা, স্কুল বার্ষিকীতে লেখালেখি, বিজ্ঞান ও বইমেলা, কবিতা লেখা, গল্প লেখা, ছবি আঁকা ইত্যাদি শিক্ষামূলক কার্যাবলী হিসেবে পরিচিতি। অধিকন্তু বিভিন্ন জাতীয় ও ধর্মীয় দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা। সাংস্কৃতিক ক্লাব গঠন করে সংগীত, নাট্যানুষ্ঠান, কবিতা, আলোচনা সভার আয়োজন করা এবং সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত বৃত্তি নির্বাচনের ব্যাপারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পরিচালিত কিছু কিছু কার্যক্রম সহায়তা করে। হাঁস-মুরগী পালন, শাক-সব্জি চাষ, হস্তশিল্প, সেলাই, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ইত্যাদি শিক্ষার্থীর মধ্যে নির্ভরশীল হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে। সর্বোপরি সামাজিক গুণের বিকাশ ঘটে থাকে। সাক্ষরতা অভিযান, স্বাস্থ্য সপ্তাহ পালন, রক্তদান কর্মসূচি, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা যেতে পারে সামাজিক গুণের বিকাশ হিসেবে। এছাড়াও আকস্মিক ও জরুরী প্রয়োজনে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ, যেমন বন্যা ও ঘূর্নিঝড় ইত্যাদিতে সেবা প্রদান করা যায়। এ ধরনের সমাজ সেবামূলক কাজে যোগদানের ফলে শিক্ষার্থীর মধ্যে সামাজিক চেতনা, শৃঙ্খলাবোধ, সেবার মনোভাব, স্বার্থত্যাগসহ বাঞ্ছিত গুণের বিকাশ ঘটে। সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী পরিচালনার জন্য কতগুলো মূলনীতি অনুসরণ করা প্রয়োজন। শিক্ষার্থীর অবশ্যই সহপাঠক্রমিক কাজ পছন্দ করার স্বাধীনতা থাকতে হবে। যার মাধ্যমে কাজে স্বতঃস্ফূর্ততা আসবে। বিদ্যালয় চলাকালীন এই কার্যক্রম হলে বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে। সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে, যেন শ্রেণি কক্ষের কাজ বিঘি না হয়। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকম-লী দ্বারা সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী পরিচালনা করতে হবে।
লেখক : গবেষক ও কলামিস্ট
আপনার মতামত লিখুন :