শিরোনাম
◈ এই প্রথম হ‌কি বিশ্বকাপে আম্পায়া‌রিং করবেন  বাংলা‌দে‌শের সে‌লিম ও শাহবাজ  ◈ পারভেজ হত্যায় গ্রেফতার অভিযুক্ত টিনা ◈ রাফালের ধ্বংসাবশেষ সরানোর প্রমাণ পেয়েছে বিবিসি ভেরিফাই! ◈ যুদ্ধক্ষেত্রের ‘সাইলেন্ট কিলার’ হারোপ ড্রোনের বিশেষত্ব কী? (ভিডিও) ◈ এখানে আরেকটা বেয়াদব আছে, সে শহীদ ফ্যামিলিকে ননসেন্স বলেছে: সংবাদ সম্মেলনেই শহীদ ইয়ামিনের বাবা(ভিডিও) ◈ দুপুরের মধ্যে সব রাজনৈতিক দলকে ডেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবি, জানিয়েছেন জামায়াতের ঢাকা দক্ষিণের সেক্রেটারি ◈ ভরসার বিনিময়ে পেয়েছি অশ্বডিম্ব, সব দোষ এখন ছাত্র উপদেষ্টা নন্দঘোষ: উপদেষ্টা মাহফুজ ◈ পাকিস্তানের চীনা জে-১০ দিয়ে ভারতের রাফাল যুদ্ধবিমান ধ্বংস! ◈ জুমার নামাজের পর বড় কর্মসূচির ঘোষণা হাসনাতের, উত্তাল যমুনা, তৈরি হচ্ছে মঞ্চ ◈ যমুনার সামনে এখনো চলছে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ

প্রকাশিত : ২৩ মার্চ, ২০১৮, ০৩:০৬ রাত
আপডেট : ২৩ মার্চ, ২০১৮, ০৩:০৬ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আল্লামা হোসাইন আহমদ মাদানি রহ. এর সফল কথা

মাহফুয আহমদ : শায়খুল ইসলাম আল্লামা হোসাইন আহমদ মাদানি (রাহ.) সম্পর্কে লিখতে যাওয়া মানে বিশাল সমুদ্রপথে যাত্রা শুরু করা। সেজন্য তাঁর কথা লিখতে হলে বিরাট কলেবরের একাধিক খ-ের কয়েকটি বই রচনা করতে হবে। লেখার ক্ষেত্রে তাঁর সমৃদ্ধ জীবনের কোনদিকটা প্রাধান্য দেয়া হবে- তা নির্ধারণ করাই লেখকের জন্য বড় একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। আর যদি তাঁকে নিয়ে লিখতে হয় সীমিত কোনো পরিসরে তবে সেটা আরও কঠিন হয়ে যায়। এক্ষেত্রে সফল জীবনের ছোট্ট একটি দিক বা বিষয় চয়ন করা গেলে হয়তো বা কিছু কথা ব্যক্ত করা যেতে পারে।

শায়খুল ইসলাম আল্লামা সায়্যিদ হোসাইন আহমদ মাদানি (রাহ.) কে আমরা কোন বিশেষণে ভূষিত করবো- সেটা এক মহান প্রশ্ন। আর এটা একজন মনীষীর শায়খুল ইসলাম হওয়ার অন্যতম পরিচয়। শায়খুল ইসলাম যিনি হয়ে থাকেন; জ্ঞান ও প্রজ্ঞার প্রতিটি শাখার লোকজন তাঁকে নিজেদের লোক এবং সেই বিষয়ের বিশেষজ্ঞ বলে দাবি করে থাকেন। এই যে দেখুন শায়খুল ইসলাম মাদানি (রাহ.)! হাদিসবিদগণ তাঁর হাদিসের দারসগুলো শুনে তাঁকে যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিসদের মধ্যে শামিল করেছেন। তাসাউফ ও তাযকিয়ার পথে মেহনতকারী পুণ্যাত্মাগণ তাঁর ইবাদত ও মুজাহাদা দেখে তাঁকে যুগশ্রেষ্ঠ ওলিগণের মধ্যে শুমার করেছেন। দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে জীবন উৎসর্গকারীগণ তাঁর কর্মোদ্যম ও কর্মক্ষমতা, সাহস ও বীরত্ব, ধৈর্য ও অবিচলতা, দক্ষতা ও বিচক্ষণতা উপলব্ধি করে তাঁকে যুগশ্রেষ্ঠ রাজনীতিজ্ঞ আখ্যায়িত করেছেন। এভাবে আরও কত অভিধায় তাঁকে বিশেষায়িত করা হয়েছে- সে হিসাব করার সামর্থ্য কে রাখে!

শায়খুল ইসলাম আল্লামা সায়্যিদ হোসাইন আহমদ মাদানি (রাহ.) এর ইন্তেকালের পর মুফাক্কিরে ইসলাম আল্লামা সায়্যিদ আবুল হাসান আলী নদবি (রাহ.) খুব চমৎকার একটি তথ্য আবিষ্কার করেছেন। ‘মাকতুবাতে শায়খুল ইসলাম' এর দ্বিতীয় খ-ের শুরুতে নাতিদীর্ঘ এক নিবন্ধে আল্লামা নদবি রাহ. বলেন, হযরত মাদানি (রাহ.) এর জীবনপ্রবাহে এমন কী জিনিস ছিল; যা তাঁকে সফলতার উচ্চ শিখরে পৌঁছিয়ে দিয়েছিল? এমন প্রশ্নের উত্তরে অনেকে বিভিন্ন অভিমত পেশ করে থাকেন। কেউ বলেন, তিনি দারুল দেওবন্দের শায়খুল হাদিস ছিলেন এ কারণে।

কারও মতে, তিনি বড়মাপের একজন বুজুর্গ ছিলেন সে কারণে। আবার কারও ধারণা, তিনি একজন খ্যাতিমান প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ ছিলেন সেজন্য তাঁর এত ঈর্ষণীয় সফলতা ও গ্রহণযোগ্যতা ছিল। আল্লামা নদবি (রাহ.) এসব উত্তরে সন্তুষ্ট নন। তিনি এসব বিষয়কে এক একটি প্রাসঙ্গিক দিক বা সম্পূরক শক্তি মনে করেন। তিনি বলেন, এসব কিছু ঠিক আছে। এগুলোতে কারও সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। তবে আমার দৃষ্টিতে মাওলানা মাদানি (রাহ.) এর মাঝে এমন দুটি বিশেষ গুণ ছিল; যেগুলো তাঁর সমকালীনদের ওপর তাঁকে শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছে। একটি হলো হামিয়্যত বা উম্মাহর প্রতি দরদ ও ভালোবাসা। আর দ্বিতীয়টি হলো আযিমত তথা দৃঢ় সংকল্প এবং অদম্য কর্মস্পৃহা। আল্লামা আবুল হাসান নদবি আরও বলেন, আমাদের মাঝে এমন দুটি মন্দ স্বভাব রয়েছে; যেগুলো আমাদেরকে পেছনে ঠেলে দিচ্ছে। একটি হলো তানগ নযরি বা সংকীর্ণ মানসিকতা। আর দ্বিতীয়টি হলো কম হাওসেলেগি তথা ভীরুতা, হীনম্মন্যতা ও আলস্য।

শায়খুল হিন্দ আল্লামা মাহমুদ হাসান (রাহ.) এর ইন্তেকালের পর ইংরেজবিরোধী আন্দোলনে হক্কানি আলেমদের পক্ষ থেকে ভারতে মুসলমানদের নেতৃত্ব দানে যারা এগিয়ে আসেন, তাঁদের মধ্যে শায়খুল ইসলাম আল্লামা হোসাইন আহমদ মাদানি (রাহ.) এবং আল্লামা শাব্বির আহমদ উসমানি (রাহ.) এর ত্যাগ ও সংগ্রাম অপরিসীম। উভয়ই ছিলেন শায়খুল হিন্দ (রাহ.) এর যোগ্য সহকর্মী এবং উত্তরসূরি শিষ্য। শায়খুল ইসলাম মাদানি (রাহ.) মহান সংগ্রামী উস্তাদের আদর্শ এবং দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তাঁর গোটা জীবনকে দ্বীন ও মিল্লাতের স্বার্থে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করেছেন। তিনি প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরি (রাহ.) এর পর ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে দারুল উলুম দেওবন্দের প্রধান অধ্যাপক নিয়োজিত হন। এক কালের অবিভক্ত ভারতের হকপন্থী আলেমদের সংগ্রামী প্রতিষ্ঠান ‘জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দ’ এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। আজীবন মাদানি (রাহ.) এই জমিয়তের ব্যানারে দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামী আন্দোলন চালিয়ে যান। ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ এসব দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস তাঁকে ব্যতিরেকে পূর্ণতা লাভ করতে পারে না। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও তাঁর জ্ঞান-গরিমা, তাকওয়া ও আল্লাহভীতি, নিষ্ঠা ও ন্যায়পরায়ণতা, বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতা আজও সর্বমহলে স্বীকৃত ও প্রশংসিত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়