নাফরুল হাসান : মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালীদের সাথে অর্ধশতাধিক জাতিগোষ্ঠীর মানুষ অংশ নিয়েছিল। গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও রেখেছে আদিবাসীরা। সমরদক্ষ পাকিস্তানী সেনাদের বিরুদ্ধে জীবনপন যুদ্ধ করেছেন সনাতন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে। তবে এখন পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে আদিবাসীদের ভূমিকার কথা অবহেলিত থেকেছে।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার ফসল। তবে, পাকিস্তানী শোষণ ছিল পুরো ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল জুড়ে। তাই স্বভাবতই এই যুদ্ধ হয়ে ওঠে নিপীড়িত মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম। পাহাড়, নদী, অরণ্য ও সমতলে বাঙালি ছাড়াও এই সংগ্রামে অংশ নেন আদিবাসীরা। ছিলেন রণাঙ্গনের অগ্রভাগে। মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়েছেন, করেছেন নানাভাবে সাহায্য, সয়েছেন পাকিস্তানী নির্যাতন। যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখায় তাদের একজন ইউকে চিং মারমা পেয়েছেন বীরবিক্রম উপাধি।
এ সম্পর্কে ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মেজবাহ কামাল বলেন, ‘দেশে আদিবাসীদের যে সংখ্যা সেই অনুপাতে তারা মুক্তিযুদ্ধে অনেক বেশি হারে প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। যদি বাঙালি জাতি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মুক্তিলাভ করে এটা তার মুক্তির পথকে নির্মাণ করবে। কাজেই তারা অংশগ্রহণ করেছে।’
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেও আদিবাসীদের অনেকেই এখনো পায়নি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। ইতিহাসে নির্মোহভাবে উঠে আসেনি তাদের বীরত্বগাঁথা। এমনকি মুক্তিযুদ্ধ কতজন আদিবাসী শহীদ হয়েছেন তার হিসাব পাওয়া যায়না কোথাও।
মুক্তিযোদ্ধা নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে ওখানকার মানুষের ভূমিকাটা লেখা হয়েছে কিন্তু যেভাবে হবার কথা সেভাবে আসেনি। অথচ সেখানে অনেকের খুব বীরোচিত ভূমিকা ছিলো।’
তৎকালীন চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় সেসময় পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন করেন। এতে অন্যদের ব্যাপারে সৃষ্টি হয় নানা বিভ্রান্তি।
ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মেজবাহ কামাল বলেন, ‘সেটা ত্রিদিব রায়ের ভূমিকা। এটা সমস্ত আদিবাসীর ভূমিকা না। এমনকি সমস্ত চাকমার ভূমিকাও নয়।’
আদিবাসীদের ইংরেজ বিরোধী আন্দোলন, পাকিস্তানের বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের সব ইতিহাস উঠে আসুক সত্যের প্রয়োজনে। স্বাধীন বাংলাদেশে সবাই থাকুক সমান সমাদরে।
সূত্র : সময় টিভি
আপনার মতামত লিখুন :