যাকারিয়া হারুন : চট্টগ্রামের ওমরগণি এম ই এস কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর মাওলানা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, বর্তমানে সৌদি আরবে যে ঘটনা শুরু হয়েছে তা শুধু ক্ষমতার লড়াইয়ের জন্য। আর একারণে মুসলিম বিশ্বের সম্পর্ক যদি ভেঙেও যায় তাতে তাদের কিছু আসে যায় না। দৈনিক আমাদের অর্থনৈতিকে দেওয়া এক সাক্ষতকারে তিনি এমন মতামত ব্যক্ত করেন।
মাওলানা আ ফ ম খালিদ হোসেন সৌদি আরবের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসলায়েলের সঙ্গে মিত্রতার সমালোচনা করে বলেন, যখনই কোনো রাজতন্ত্রে অসৎ ষড়যন্ত্র শুরু হয় তখনই রাজতন্ত্র ভেঙ্গে যায়।
তিনি বলেন, সৌদি আরবে ১০০ বছর বা তার বেশি সময় ধরে রাজতন্ত্র চলে আসছে। সম্প্রতি বাদশাহ সালমান তার ছেলে মোহাম্মদকে পরবর্তী বাদশাহ বানানোর লক্ষ্যে কাজ করছে। এ জন্য সৌদি রাজ পরিবারের যারা তার প্রতিবন্ধক হতে পারে তাদের দমন করার জন্য আটক করে রেখেছে।
সৌদি সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অস্ত্র চুক্তি করেছে। বিলিয়ন টাকার অস্ত্র কিনেছে। স¤প্রতি সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান তার ক্ষমতা প্রতিদ্ব›িদ্ববিহীন করতে রাজ পরিবারের ১১ জন ব্যক্তি ও সাবেক মন্ত্রী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আটক করে রেখেছে। আল ওয়ালিদ বিন তালাল সৌদি ধনকুবের মালিক। তাকে জেলে বন্দী করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোরঞ্জনের জন্য। আল ওয়ালিদ বিন তালাল ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বিরোধ ছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সম্পর্কে বলেছিল, সে বাবার টাকায় মার্কিন রাজনীতি চালানোর ষড়যন্ত্র করছে।
সৌদির সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রতা কীভাবে দেখছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সৌদি রাজপরিবার থেকে বাদশাহ সালমান চাচ্ছে তার ছেলের মাঝে সৌদি ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা। এ জন্য মার্কিনীদের সঙ্গে মিত্রতা করছে। যেন তার এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কোনো ধরনের বিপ্লব বা ষড়যন্ত্র করার সাহস না পায়। আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়ের জামাই কুশনার একজন ইহুদী।
সৌদি আরব ও ইসরায়েলের সস্পর্ক কোন পর্যায়ের? এমন প্রশ্নের জবাবে ডক্টর মাওলানা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, লজ্জার বিষয় হলো সৌদি আরব ইসলায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক করার জন্য উদগ্রীব। ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদির সম্পর্ক জোরদার করছে। ইসরায়েল সৌদি আরবে বিনিয়োগ করবে। ইউনেস্কোর ভোটে সৌদি আরব কাতারের মুসলিম প্রতিনিধিকে বাদ দিয়ে ইসরায়েলের প্রতিনিধিকে ভোট দেয়। এর জন্য মাত্র দুই ভোটে কাতারের মুসলিম প্রতিনিধি পরাজিত হয়। আরবলীগে ১৮ টি মুসলিম দেশ, আর ওআইসিতে ৫৭ টি দেশ রয়েছে। অথচ এসব সংস্থা ব্যর্থ হয়ে পরে আছে। এর নেপথ্যে ইহুদীবাদিরা কাজ করছে।
মুসলিম উম্মাহর এ দুর্দিনে সৌদি আরব কি করছে? এ বিষয়ে ডক্টর মাওলানা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, বর্তমানে মুসলিম উম্মাহ নিয়ে ভাবার সুযোগ নেই সৌদির। নিজেদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করা নিয়ে ব্যস্ত। অথচ সৌদির সাবেক বাদশাহ ফয়সাল বলেছিলেন, সৌদির সর্বশেষ তেলের ফোটা বিক্রি করে হলেও ইহুদীদের শেষ করে ছাড়ব। তার এ ঘোষণার পর তাকে রাজপরিবারের আততায়ী হত্যা করে।
সৌদি আরব কোন দিকে এদিয়ে যাচ্ছে? এ বিষয়ে ডক্টর মাওলানা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, বিশ্ব মুসলিমের ভালবাসার দেশ সৌদি আরব। এ মাটিতে শুয়ে আছেন পুণ্য ব্যক্তিগণ। আর সৌদি বাদশাহ নিজেদের ক্ষমতা নিয়ে মত্ত। বাদশাহ সালমান তার ছেলে মোহাম্মদকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। অথচ বাদশাহ আব্দুল আজিজের এক ছেলে পরবর্তী সৌদি বাদশাহ হওয়ার কথা ছিল। বর্তমানে সৌদি নিজের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এজন্য তাদের যা করতে হয়, তারা করবে।
আপনার মতামত লিখুন :