নাসরিন বৃষ্টি: আগে তো আর এখনকার মতো পানি বিশুদ্ধকরণের ফিল্টার ছিল না। বাড়ির বয়স্ক মানুষটিকে দেখা যেত, জলে এক টুকরো ফিটকিরি ফেলে নিশ্চিন্ত হতেন। এতে জল পরিশুদ্ধ হয়ে, ময়লা থিতিয়ে পড়তো নীচে। যেমন দাঁড়ি কাটতে গিয়ে গালটা আচমকা কেটে গেলে স্যাভলন বা কোনও আফটারসেভের খোঁজ পড়তো না। হাতের কাছে থাকা ফিটকিরির দলা গালে ঘষে নিতেন। ফিটকিরি কম দামি হলেও বেশ উপকারী। এটি জীবাণুনাশকও বটে। এমন বহু গুণ আছে ফিটকিরির। অথচ এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
ফিটকিরির গুণসমূহ:
ত্বকের যত্নে: আগেরদিনের মেয়েরা রূপচর্চায় ফিটকিরি ব্যবহার করতো। কারণ, ফিটকিরি ত্বকে বলিরেখা পড়তে দেয় না। এছাড়া মুখে ব্রণ, ফুসকুড়ি, ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, চামড়া কুচকে যাওয়া রোধে ফিটকিরি ব্যবহার করা যায়।
দাঁত ও মুখের যত্নে: ফিটকিরি এ্যান্টিব্যকটেরিয়াল পদার্থ। ফিটকিরি মুখের দুর্গন্ধ ও দাঁতের যন্ত্রণা দূর করে।
আঙ্গুলে হাজা: যারা পানি নিয়ে বেশি কাজ করেন অনেক সময় তাদের হাত ও নখের কোনে ঘা হয়। তা দূর করতে ফিটকিরির ব্যবহার অতুলনীয়। কিংবা পায়ের পাতা ফোলা কমাতেও ফিটকিরি ব্যবহার করা যায়। এক টুকরো ফিটকিরি পানিতে দিয়ে পানিটা ভালো করে গরম করে তারপর ঠাণ্ডা করে নিয়ে তাতে পা দুটো ডুবিয়ে রাখলে দ্রুতই বেশ আরাম পাওয়া যাবে।
হঠাৎ রক্ত: সেভ করতে গিয়ে গাল কেটে গেলে এখনো সেলুনে ফিটকিরি ঘষে দেয়। এছাড়া আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে হঠাৎ রক্তপাত শুরু হলে ফিটকিরি চূর্ণ করে ওই স্থানে লাগালে রক্তপাত মুহূর্তেই বন্ধ হবে।
টনসিলে আরাম: ঠাণ্ডা লেগে গলা ব্যাথা হলে, গরম পানিতে এক চিমটি লবণ ও ফিটকিরি চূর্ণ মিশিয়ে দিনে কয়েকবার গরগড়িয়ে কুলি করলে বেশ আরাম পাওয়া যাবে।
অধিক ঘাম ও প্রতিকার: গরমে তো ঘাম হবেই। কিন্তু যারা বেশি ঘামেন, পরনের পোশাক ভিজে যায় তাদের এই অস্বস্তিকর অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে পারে এক টুকরো ফিটকিরি। গোসলের সময় এক টুকরো ফিটকিরি পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে ওই পানি গায়ে ঢালুন। এভাবে কয়েকদিন গোসল করলে স্বস্তি মিলবে।
মাথা ব্যাথা সারাতে: লাল, কাচা ফিটকিরি ১ গ্রাম ও ছোট এলাচি বীজ, ৬ গ্রাম উভয় উপাদানকে পৃথক পৃথক কুটে-পিষে কাপড়ে ছেঁকে নিতে হয়। অল্প কিছু পানিসহ পান করলে মাথা ব্যাথা দ্রুত সেরে যায়।
কান ব্যথা: ফিটকিরি ভেজে গুড়া করে সামান্য একটু গুড়া কানে দিতে হয়। তারপর কয়েক ফোঁটা লেবুর রস অথবা পেঁয়াজের রস কানে দিলে কান ব্যথা চলে যায়।
কাগজ শিল্পে, ট্যানারি (চামড়া) শিল্পে: কাগজ শিল্পে ও ট্যানারি শিল্পের বিভিন্ন কাজে ফিটকিরি ব্যবহার করা হয়।
সমুদ্রগামী নাবিকের পোশাক তৈরি ও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রে : জাহাজের নাবিকগণ যে কাপড় ও কাগজ ব্যবহার করেন তা আগুনে পোড়ে না এ ধরনের কাপড় ও কাগজ বানাতে ফিটকিরির প্রয়োজন হয়। অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রে যে রাসায়নিক দ্রব্য থাকে তা ফিটকিরি দিয়ে প্রস্তুত হয়।