মাসুদ আলম : শনিবার সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, শুক্রবার রাতে ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার নাসির নগর এলাকা থেকে কনস্টেবল কোরবান আলী হত্যাকান্ডের মূল আসামী বাস চালক জাকির হোসেনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-২। এছাড়া ঢাকার সাভার এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে ঘাতক বাসের মালিক আলম ওরফে খোকা গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি বলেন, গত ৬ জুন সকালে বাংলামোটর সড়কে মোটর সাইকেলযোগে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে ডিউটিতে যাওয়ার পথে ওয়েলকাম পরিবহনের একটি বাস মোটরসাইকেলে থাকা কনস্টেবল কোরবান আলীকে চাপা দেয়। পরবর্তীতে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি রাজারবাগ পুলিশ টেলিকম-এ কর্মরত ছিলেন। তিনি ২০০৫ সালে বাংলাদেশ পুলিশ এ কনস্টেবল পদে যোগদান করেন। বাসটি ফিটনেসবিহীন ।
মঈন আরও বলেন, জাকির ২০০৫ সালে ঢাকায় টেম্পুর হেলপার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করে। এরপর দীর্ঘদিন হেলপার থাকার পর ২০১০ সালের দিকে তিনি গাজীপুর থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত লেগুনা চালাতো। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে বাসের হেলপার হিসেবে ঢাকায় ৭ ও ৮ নং রোডে চলাচলকারী বাসে চাকুরি নেয়। ২০১৮ সাল পর্যন্ত ওয়েলকাম কোম্পানীর ২টি বাসে হেলপার ও কন্ট্রাক্টরের কাজ করে। পরবর্তীতে ২০১৮ সাল থেকে লাব্বাইক ও ওয়েলকাম ট্রান্সপোর্টে ড্রাইভার হিসেবে কাজ করছিল। এরপর বিভিন্ন কোম্পানীর বাসে অস্থায়ী চালক হিসেবে বাস চালাতো জাকির। ২০১৯ সালে বিআরটিএ থেকে হালকা যানবাহন চালনার লাইসেন্স করে।
তিনি বলেন, প্রায় এক মাস পূর্বে খোকনের সঙ্গে জাকিরের পরিচয় হয়। গত মে মাসের মাঝামাঝি থেকে ওয়েলকাম পরিবহনের ওই বাস মালিকের সঙ্গে দৈনিক ২৫০০ টাকা চুক্তিভিত্তিক হারে জিরানি বাজার থেকে আরামবাগ রুটে বাস চালানো শুরু করে এবং অবশিষ্ট টাকা চালক এবং হেলপার ভাগ করে নিত।
মঈন বলেন, সাভার জিরানি বাজার থেকে আরামবাগ যাওয়ার পথে কারওয়ান বাজার সিগন্যাল থেকে যাত্রী নিয়ে পরবর্তী সিগন্যালে অধিক সংখ্যক যাত্রী নেয়ার জন্য বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালাতে থাকে। এ সময় তার সামনে থাকা মোটরসাইকেল আরোহীকে চাপা দিয়ে দ্রুত গতিতে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। অতঃপর বাংলামোটরে গাড়ি রেখে পালিয়ে যায়। অপর একটি বাসে করে ফার্মগেট চলে আসে। বাসে ওঠে সে তার মোবাইল থেকে তার হেলপারকে কল দিলে তার হেলপার জানায় বাসের নিচে চাপা পড়া ভিকটিম সম্ভবত মারা গিয়েছে। পরবর্তীতে বাস কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি অবহিত করে। সে সারাদিন ঢাকার বিভিন্ন এলাকা বিচ্ছিন্নভাবে ঘোরাঘুরি করে রাতে বাসযোগে চট্টগ্রামে গমন করে সেখানে আত্মগোপন করে। অতঃপর চট্টগ্রাম থেকে ব্রাহ্মনবাড়িয়ায় আত্মগোপন করে। বাস চালক জাকিরের পরিকল্পনা ছিল সীমান্ত পেরিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে অবৈধভাবে পালিয়ে যাওয়া।
তিনি আরও বলেন, বাসের মালিক খোকা ২০১৭ সালে পরিবহণ ব্যবসা শুরু করে। প্রথমে কিস্তির মাধ্যমে একটি বাস ক্রয় করে জিরানি টু মতিঝিল রুটে চলাচল করাত। তিনি ২০২০ সালে আরেকটি গাড়ি ক্রয় করে রুট পারমিট ব্যতীত অবৈধভাবে গাড়িটি চলাচল করাত। পরবর্তীতে রুট পারমিটের জন্য আবেদন করে কিন্তু এখনো পারমিট পায়নি। পারমিট না থাকা সত্ত্বেও গত ২ বছর ধরে গাড়িটি রাস্তায় চলাচল করছিলো।
আপনার মতামত লিখুন :