শিরোনাম
◈ যৌথবাহিনীর অভিযান: ফেনীতে অস্ত্রসহ আটক ৪ ◈ আমেরিকায় একান্ত বৈঠক হবে না মোদী-ইউনূসের : আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাই ◈ ওয়াকি–টকি বিস্ফোরণে লেবাননে এবার নিহত ১৪, আহত ৪৫০ ◈ কমিশন থেকে সরে গেলেও যুক্ত থাকবেন শাহদীন মালিক ! ◈ শেখ হাসিনা সরকার রেখে গেছে ১০ লাখ কোটি টাকার বিদেশি ঋণ : কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন ◈ কী হয়েছিল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজায়? যা জানা গেল ভাইরাল সেই ভিডিওটির সম্পর্কে (ভিডিও) ◈ বিকেলে গণপিটুনি, রাতে জাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু  ◈ আন্দোলনে নিহতদের পরিবার পাবে ৫ লাখ, আহতরা ১ লাখ ◈ প্রধান বিচারপতি যে ১২ নির্দেশনা দিলেন ◈ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থেকে বাদাম বেঁচে খেলেও ভালো করতাম : রিমান্ডে যুবলীগ নেতা

প্রকাশিত : ০৫ জুন, ২০২২, ০৪:১৭ সকাল
আপডেট : ০৫ জুন, ২০২২, ০৩:৫৬ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

হাইড্রোজেন পার অক্সাইড থেকে এই প্রলয়কাণ্ড

ছবি: সংগৃহীত

সালেহ্ বিপ্লব: আগুনের কারণ খোঁজার সময় এখনও আসেনি, দাউ দাউ জ্বলছে কনটেইনার ইয়ার্ড। মরদেহের সংখ্যা বাড়ছে, আহতের সংখ্যাও। এরই মধ্যে স্থানীয় সূত্রে খোঁজখবর নিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে কনটেইনার ডিপোতে দাহ্য কোনো পদার্থ ছিলো। 

দাহ্য বা বিস্ফোরক খুঁজতে গিয়ে ভোর চারটার দিকে জানা গেছে, কন্টেইনার ডিপোতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের একটি চালান এসেছিলো। রাত ১০টার দিকে এই রাসায়নিকের একটি কন্টেইনারই ভয়াবহ শব্দে বিস্ফোরিত হয়। এরপর আরো কয়েকটি বিস্ফোরণ। কয়েক কিলোমিটার দূরের ভবনে কাঁচ ভেঙে গেছে শকওয়েভের ধাক্কায়।  

ধারণা করা হচ্ছে, হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের কারণেই আগুন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। পানির সংকট তো রয়েছেই। 

সীতাকুণ্ডের কাশেম জুট মিলস সংলগ্ন বিএম কন্টেনার ডিপো চট্টগ্রামের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ স্মার্ট গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান। সাত হাজার টিইইউএস ধারণক্ষমতার এই কন্টেনার ডিপোতে গতকাল সাড়ে ৪ হাজারের মতো কন্টেনার ছিল। এর মধ্যে ১৬টি কন্টেনার ছিল হাইড্রোজেন পার অক্সাইড। নিজেদের অপর একটি কারখানায় উৎপাদিত অত্যন্ত দাহ্য এই কেমিক্যাল ভর্তি কন্টেনারগুলো ডিপোর এক পাশে ছিল। এই কন্টেনারগুলোর একটিতে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয় গতকাল রাত ৯টায়।

কোত্থেকে এই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে তা জানা না গেলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, হাইড্রোজেন পার অঙাইড এত বেশি দাহ্য পদার্থ যে, সামান্য উৎস থেকেই এগুলোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। ডিপোতে রক্ষিত ১৬টি কন্টেনারের একটিতে গতকাল রাতে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হলে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়া হয়। খবর জানানো হয় শিল্প পুলিশকে। ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিভানোর জন্য কাজ শুরু করে। পুলিশও অবস্থান নেয় ঘটনাস্থলে। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছিল ফায়ার সার্ভিস। কিন্তু রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ হঠাৎ বিপুল শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে সীতাকুণ্ডের বিস্তৃত এলাকার পাশাপাশি হাটহাজারী, রাউজান ও মীরসরাইয়ের অনেক এলাকা কেঁপে ওঠে। অনেক উপরে উঠে যায় কন্টেনারসহ নানা পণ্য। আগুন ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। বিশাল কন্টেনার ডিপোর পাশাপাশি সন্নিকটস্থ দুটি বাড়িতেও আগুনের বিস্তার ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

সীতাকুণ্ডের কাশেম জুটসহ সন্নিহিত কয়েক কিলোমিটার এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ এত তীব্র হয় যে তাতে বাড়িঘর এবং মসজিদের জানালার কাচ ভেঙে পড়ে। ঘটনায় পুরো এলাকায় তীব্র আতংক দেখা দেয়। অনেকেই বাড়িঘর থেকে বেরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছুটতে থাকেন।

পুলিশ জানিয়েছে, সীতাকুণ্ড থানা পুলিশের কনস্টেবল তুহিনের পা বিচ্ছিন্নসহ আরও অন্তত ৫ কনস্টেবল, ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) মোতাহার হোসেন ও শিল্প পুলিশের একাধিক সদস্য আহত হয়েছেন।

ঘটনার পর ডিপোর ভিতরে রক্তাক্ত মানুষের আহাজারি শুরু হয়। ফায়ার সার্ভিসের ১০ জনের মতো কর্মী আহত হন। এক পুলিশ সদস্যের পা উড়ে যায়। গুরুতর আহত হন ৫ জন কনস্টেবলসহ ৯ পুলিশ সদস্য। ডিপোর অনেক শ্রমিক-কর্মচারী এবং আগুন নিয়ন্ত্রণে যাওয়া স্বেচ্ছাসেবকদের অনেকেই আহত হন। আগুনের লেলিহান শিখা এত ব্যাপক আকার ধারণ করে যে, ফায়ার সার্ভিসের পক্ষেও কাজ করা কঠিন হয়ে উঠছিল। সাধারণ মানুষ দূর থেকে আহাজারি করলেও আগুন নিভানো কিংবা হতাহতদের উদ্ধারে কাছে যেতে পারছিলেন না।

এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন বিএম ডিপো থেকে দলে দলে আহতদের এনে রাস্তায় বিভিন্ন গাড়িতে তুলে দেয়া হচ্ছিল। অনেক অ্যাম্বুলেন্স রোগীদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। সীতাকুণ্ডের সরকারি-বেসরকারি সব অ্যাম্বুলেন্স ও চট্টগ্রাম শহর থেকে অ্যাম্বুলেন্স গিয়ে অগ্নিদগ্ধদের হাসপাতালে নিয়ে আসে। ভাটিয়ারীতে শিপ ব্রেকার্স এসোসিয়েশনের হাসপাতাল এবং ভাটিয়ারী মুক্তিযোদ্ধা হাসপাতালেও বেশ কিছু অগ্নিদগ্ধকে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

মহাসড়কের কাশেম জুট মিলস এলাকায় ছোপ ছোপ রক্ত। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকেরা বিভিন্ন যানবাহনের গতিরোধ করে আহতদের হাসপাতালে পাঠান। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তিন শতাধিক অগ্নিদগ্ধকে চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রাজিব পালিত বলেন, নিহত ৪ জনের মধ্যে ২ জন ঘটনাস্থলেই মারা যান। বাকি ২ জন ২৪ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। 

প্রত্যক্ষদর্শী একজন পুলিশ সদস্য জানান, চোখের সামনে কন্টেনার এবং মানুষকে উড়ে যেতে দেখেছি। আমার মনে হয় ১৫/১৬ জন মানুষ কয়লা হয়ে উড়ে গেছে। তবে ঠিক কতজন মারা গেছে সেটি নিশ্চিত হতে সময় লাগবে।

বিষয়টি নিয়ে বিএম কন্টেনার ডিপোর একাধিক কর্মকর্তার সাথে গত রাতে যোগাযোগ করা হয়। তারা সবাই নিজেদের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে বলেন, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড থেকে আগুনের সূত্রপাত। তারা বলেন, প্রচুর কন্টেনার রয়েছে ডিপোতে। এর মধ্যে কোথায় আগুন লেগেছে, কত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা বলা মুশকিল।

ডিপোর ভিতরে প্রচুর লোক কাজ করে উল্লেখ করে কর্মকর্তারা বলেন, ডিপোর বিশাল কর্মীবাহিনীর পাশাপাশি শত শত ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানের চালক-সহকারীও ভিতরে থাকেন। ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হলে এদের অনেকেই আগুন দেখতে বা নিভাতে ওখানে ভিড় করেন। বিস্ফোরণের পর এদের অনেকেই হতাহত হয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গত রাতে শেষ খবরে জানা গেছে, চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ফায়ার সার্ভিস অগ্নিকাণ্ডের কারণ কেমিক্যাল কন্টেনার বলে উল্লেখ করলেও ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে কিছু জানাতে পারেনি।

নগরীর আগ্রাবাদ, কুমিরা, বায়েজিদ, সীতাকুণ্ড, মীরসরাই ও বন্দরসহ ৯টি স্টেশন থেকে ২৪ ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। এছাড়া আগ্রাবাদ, ফেনী ও হাটহাজারী স্টেশন থেকে চারটি অ্যাম্বুলেন্স ঘটনাস্থলে পৌঁছে হতাহতদের উদ্ধার করে।

রাতেই সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার প্রমুখ চমেক হাসপাতালে আহতদের দেখতে যান।

আর বিস্ফোরণের তীব্রতায় ইয়ার্ডের ভেতরে দাহ্য যা ছিলো, সবই আগুনের শিকার, ঠিক বলা যাচ্ছে না, কখন নিয়ন্ত্রণে আসবে আগুন। 

ভেতরে কতোজন স্টাফ কাজ করছিলেন, এখনো জানা যায়নি। 

সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, একটা কেমিক্যালের কন্টেইনার বিস্ফোরিত হয়, সঙ্গে সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। কাস্টমস, সিএন্ডএফ ও নিরাপত্তা বাহিনীর স্টাফদের অনেকে আহত হয়েছেন। শ্রমিকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হওয়ায় তাদের মধ্যেই আহত-নিহতের সংখ্যা বেশি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়