ডেস্ক রিপোর্ট: চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানা প্রাঙ্গণে রাখা ১১টি লাশের ব্যাগ। চোখের পানি মুছতে মুছতে ছেলের লাশ খুঁজছেন মোতাহার হোসেন খান। প্রতিটি ব্যাগ খুলে দেখতে দেখতে পেয়ে যান সন্তানের নিথর রক্তাক্ত দেহ।
ছেলে মাসুদ রাকিব শুক্রবার দুপুরে প্রাণ হারিয়েছেন মাইক্রোবাস দুর্ঘটনায়। মাইক্রোবাসটি মীরসরাইয়ে রেললাইনে উঠে পড়লে ট্রেন সেটিকে ধাক্কা দেয়। ঘটনাস্থলেই মাসুদসহ ১১ জন প্রাণ হারান। রেলওয়ে থানায় শুক্রবার রাত ৯টার দিকে মরদেহগুলোর হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়।
ছেলের মরদেহ নিতে এলে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা হয় মোতাহারের। তিনি বলেন, ওর (রাকিবের) সঙ্গে রাতে (বৃহস্পতিবার) আমার কথা হয়। তখন বলে, আব্বু আমি চলে যাব, দোয়া করিয়েন। আমি দুপুরে টিভিতে দেখি অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে। এরপর আমার হুঁশ হয়েছে, আমার ছেলে তো সেখানে। এখন আমার ছেলে আর নাই।
ছেলের স্মৃতিচারণে তিনি বলেন, আমার ছেলে প্রথম থেকে নানাবাড়িতে (আমানবাজার) থেকে লেখাপড়া করেছে। এসএসসি, এইচএসএসি দুটোতেই সে গোল্ডেন পেয়েছে। সে কলেজ পাসের পর ওখানেই একটা কোচিং সেন্টার করেছে বন্ধুবান্ধব নিয়ে। সে ছিল স্যার (শিক্ষক)। সে সেখানে ৬০ থেকে ৭০ জন ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাত।
এসব বলতে বলতে ডুকরে কেঁদে ওঠেন, ছেলের লাশ বয়ে নিয়ে যান বাড়ির পথে। রেলওয়ে থানায় প্রথম দফায় ৯ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরিবারের সদস্য না আসায় দুটি মরদেহ সেখানে রেখে দেয়া হয়। সে দুটি শান্ত শীল ও আসিফ উদ্দিনের।
বন্ধু শান্তর লাশের পাশে বসে কাঁদতে দেখা যায় মো. তানভীরকে। অভিভাবক না আসায় তার কাছে পুলিশ মরদেহ দেয়নি।
তানভীর জানান, একসঙ্গে পড়াশোনা করেছেন তারা কুলগাঁও সিটি করপোরেশন স্কুলে। বেড়ে ওঠাও একসঙ্গে। কলেজে উঠে আলাদা হলেও বন্ধুত্বে কখনও ভাটা পড়েনি। মৃত্যু তাদের শেষ পর্যন্ত আলাদাই করেছে।
কাঁদতে কাঁদতে তানভীর বলেন, যাওয়ার আগে যদি একবার দেখা করত। শুধু একটাবার দেখা করত। সেই আফসোসে আমি মরে যাব। কেন এমন হলো বন্ধু? কী করব আমি? ঘণ্টা দেড়েক পর শান্তর মা মিতা শীল গিয়ে ছেলের মরদেহ বুঝে নেন।
এরপর বাকি থাকে আসিফ উদ্দিনের মরদেহ। রাত সাড়ে ১১টার দিকে সেটি নিতে আসেন বাবা আব্দুল আজিজ। বারবার লুটিয়ে পড়ছিলেন। সঙ্গে থাকা স্বজনরা তাকে সামলে নিচ্ছিলেন।
মীরসরাইয়ের বড়তাকিয়া রেলস্টেশন এলাকায় শুক্রবার বেলা সোয়া ১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রামের হাটহাজারীর আমানবাজারে আরঅ্যান্ডজে প্রাইভেট কেয়ার নামে কোচিং সেন্টারটির ছাত্র-শিক্ষকরা এই মাইক্রোতে করে ঘুরতে গেছিলেন খৈয়াছড়া ঝরনায়।
আপনার মতামত লিখুন :