শিরোনাম

প্রকাশিত : ২১ জুলাই, ২০২২, ০২:৫৪ দুপুর
আপডেট : ২১ জুলাই, ২০২২, ০২:৫৪ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ঈদযাত্রায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ৯৫

দুর্ঘটনা

শরীফ শাওন: ঈদুল আজহার আগে-পরে ১২ দিনে (৫ জুলাই-১৬ জুলাই) দেশে ২৭৪ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩১১ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে ১১৯৭ জন। ২০২১ সালের ঈদুল আজহা উদযাপনকালে ৮৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৯৫ জন নিহত হয়েছিল। এই হিসেবে এ বছর ঈদুল আজহায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেড়েছে ৮৫.৫৪ শতাংশ এবং প্রাণহানি বেড়েছে ১৯.৪৭ শতাংশ।

বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। সংগঠনের দাবি, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের ঈদুল আজহায় নিহতের মধ্যে ৪৩ জন নারী এবং শিশু ৫৮ জন। একই সময়ে  ৯ টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১৩ জন নিহত হয়েছে এবং ৬ জন নিখোঁজ রয়েছে। ১৪ টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত এবং ৪ জন আহত হয়েছে।

এবছর মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৫৬.২০ শতাংশ জানিয়ে বলা হয়,  নিহতের ৩৯.৫৪ শতাংশই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার। মোট ১৫৪ টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১২৩ জন। পথচারী নিহত হয়েছেন (১৪.৭৯ শতাংশ) ৪৬ জন, যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন (১৭.০৪ শতাংশ) ৫৩ জন।

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত চালক ও আরোহীদের মধ্যে ৫৯.৩৪ শতাংশের বয়স ১৪ থেকে ২০ বছর এবং নিহত পথচারীদের ৩২.৬০ শতাংশ বেপরোয়া মোটরসাইকেলের ধাক্কায় নিহত হয়েছে।   
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে বলা হয়, অন্য যানবাহনের সাথে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটেছে ৩১.১৬ শতাংশ, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ২২.০৭ শতাংশ, অন্য যানবাহন দ্বারা মোটরসাইকেল ধাক্কা/চাপায় আক্রান্ত হয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪৬.৭৫ শতাংশ।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন জানায়, ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ৯৩ টি দুর্ঘটনায় ১০৪ জন নিহত। ময়মনসিংহ বিভাগে সবচেয়ে কম ১৪ টি দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে কম ১৭ জন নিহত হয়েছে। একক জেলা হিসেবে টাঙ্গাইল জেলায় সবচেয়ে বেশি ২০ জন নিহত হয়েছে। সবচেয়ে কম খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, মাগুরা, ঝালকাঠি, সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও ঠাকুরগাঁও জেলায়। এই ৯টি জেলায় স্বল্প মাত্রার কিছু দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। রাজধানীতে ১৯টি দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত এবং ১৭ জন আহত হয়েছে।

দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান মতে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ৩৩.৯৪ শতাংশ, প্রাণহানি ৩৩.৪৪ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১৪.৫৯ শতাংশ, প্রাণহানি ১৪.১৪ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১২.৪০ শতাংশ, প্রাণহানি ১৩.৫০ শতাংশ, খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ১৬.৭৮ শতাংশ, প্রাণহানি ১১.৫৭ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৫.৪৭ শতাংশ, প্রাণহানি ৫.৪৬ শতাংশ, সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৪.৭৪ শতাংশ, প্রাণহানি ৬.৭৫ শতাংশ, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ৬.৯৩ শতাংশ, প্রাণহানি ৯.৩২ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৫.১০ শতাংশ, প্রাণহানি ৫.৭৮ শতাংশ ঘটেছে।

ঈদযাত্রা ও দুর্ঘটনা পর্যালোচনায় বলা হয়, এবারের ঈদুল আজহা উদযাপনকালে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে ২৬ জন নিহত হয়েছে। দুর্ঘটনা ফিরতি যাত্রায় বেশি হয়েছে। গত বছরের ঈদুল আজহার চেয়ে এ বছরের ঈদুল আজহায় দুর্ঘটনা বেড়েছে ৫৯.৩০ শতাংশ এবং প্রাণহানি বেড়েছে ৩৭.৬১ শতাংশ। গত ঈদুল আজহায় করোনা সংক্রমণরোধে মানুষের চলাচল সীমিত থাকার কারণে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি কম ছিল। তবে এটাও ঠিক, দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ক্রমাগত বাড়ছে। এই বৃদ্ধি প্রবণতার প্রধান কারণ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বৃদ্ধি।

সংঠনের পক্ষে বলা হয়, ঈদ যাত্রায় মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা গত ঈদুল ফিতরের তুলনায় কিছুটা কম হলেও জনভোগান্তি বেড়েছে। মাটরসাইকেল বন্ধের সুযোগে পরিবহন মালিকরা যাত্রী প্রতি ২/৩ গুণ বেশি ভাড়া আদায় করেছে। সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া এই ভাড়া নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণে সরকার তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। মোটরসাইকেল বন্ধের কারণে যাত্রীর চাপা বেশি থাকায় পরিবহন মালিকরা তাদের অতি ভাঙ্গাচোরা যাচ্ছেতাই মার্কা যানবাহন রাস্তায় নামিয়েছে। এসব যানবাহন সড়কে বিকল হয়ে যানজট বাড়িয়েছে। মানুষ বাধ্য হয়ে মুরগীবাহী পিকআপ ভ্যানের খাঁচার মধ্যে বসেও বাড়িতে গেছে। রাজধানীতে চলাচলকারী বহু বাস আন্তঃজেলায় চলাচল করেছে। ফলে রাজধানীতে তীব্র পরিবহন সংকট সৃষ্টি হয়েছে এবং এই সুযোগে সকল প্রকার যানবাহন ব্যাপক ভাড়া নৈরাজ্য চালিয়েছে। ঈদ যাত্রায় রেল গাড়িতে ব্যাপক শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। টিকেট কালোবাজারী ও ভাড়া নৈরাজ্য ছিল পূর্বের মতোই। নৌ-পথে অনেকটা স্বস্তি থাকলেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগও ছিল। ঈদের আগে সরকারি ছুটি কম থাকার কারণে ঘরমুখী যাত্রায় জনভোগান্তি বেশি হয়েছে। ঈদের পরে ছুটি কম থাকলেও মানুষ এক সপ্তাহ ধরে ধীরে ধীরে ঢাকায় ফিরেছে। ফলে ফিরতি যাত্রা অনেকটা স্বস্তিদায়ক ছিল। যদিও ভাড়া নৈরাজ্য বহাল ছিল এবং এখনও চলছে।

এবারের ঈদুল আজহায় রাজধানী ঢাকা থেকে কমবেশি ১ কোটি মানুষ ঘরমুখী যাত্রা করেছে এবং প্রায় ৩ কোটি মানুষ আন্তঃজেলায় যাতায়াত করেছে। পদ্মা সেতুর কারণে দক্ষিণ বঙ্গগামী ঈদ যাত্রা অনেক বেশি স্বস্তির ছিল এবং পাটুরিয়া-দৌলদিয়া ঘাটে যানবাহনের কোনো চাপ ছিল না। উত্তর বঙ্গগামী সড়কে দীর্ঘ যানজট হয়েছে। ৬ ঘন্টার যাত্রা ২৫/২৬ ঘন্টায় ঠেকেছে।

সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান জানান, সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের জীবনে এখন নিত্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সরকারের তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। “সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮” বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে মূলত সড়ক পরিবহন খাতের নৈরাজ্য ও অব্যস্থাপনার কারণে। এই অবস্থার উন্নয়নে টেকসই সড়ক পরিবহন কৌশল প্রণয়ন করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা।

দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১২৩ জন (৩৯.৫৪ শতাংশ), বাস যাত্রী ৩৩ জন (১০.৬১ শতাংশ), ট্রাক-পিকআপ-লরি আরোহী ১৬ জন (৫.১৪ শতাংশ), মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার যাত্রী ১৮ জন (৫.৭৮ শতাংশ), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান) ৫৭ জন (১৮.৩২ শতাংশ), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-আলমসাধু-টমটম-মাহিন্দ্র-পাওয়াটিলার) ১০ জন (৩.২১ শতাংশ) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা আরোহী ৮ জন (২.৫৭ শতাংশ) নিহত হয়েছে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১০৯টি (৩৯.৭৮ শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে, ৭৭টি (২৮.১০ শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে, ৬১টি (২২.২৬ শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে এবং ২৭টি (৯.৮৫ শতাংশ) শহরের সড়কে সংঘটিত হয়েছে।

দুর্ঘটনাসমূহের ৭৬টি (২৭.৭৩ শতাংশ) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৯৯টি (৩৬.১৩ শতাংশ) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ৫১টি (১৮.৬১ শতাংশ) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেয়া, ৪২টি (১৫.৩২ শতাংশ) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ৬টি (২.১৮ শতাংশ) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-লরি ১৬.৪২ শতাংশ, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-জীপ ৩.৭৪ শতাংশ, যাত্রীবাহী বাস ১৭.৪৬ শতাংশ, মোটরসাইকেল ৩৪.০৯ শতাংশ, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-মিশুক) ১৯.৯৫ শতাংশ, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন- (নসিমন-আলমসাধু-মাহিন্দ্র-টমটম-পাওয়ারটিলার) ৬.৪৪ শতাংশ এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা ১.৮৭ শতাংশ।

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৪৮১টি। (ট্রাক ৩৬, বাস ৮৪, কাভার্ডভ্যান ৮, পিকআপ ১৬, ট্রাক্টর ৬, লরি ২, তেলবাহী লরি ৩, দশ চাকার লরি ১, ঢাকা সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী ট্রাক ১, ড্রাম ট্রাক ৬, মাইক্রোবাস ৬, প্রাইভেটকার ১১, জীপ ১, মোটরসাইকেল ১৬৪, থ্রি-হুইলার ৯৬ (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-মিশুক), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ৩১ (নসিমন-আলমসাধু-টমটম-মাহিন্দ্র-পাওয়াটিলার) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা ৯ টি।

দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাসমূহ ঘটেছে ভোরে ৪.৭৪ শতাংশ, সকালে ২২.৬২ শতাংশ, দুপুরে ১৯.৭০ শতাংশ, বিকালে ২০.৮০ শতাংশ, সন্ধ্যায় ৯.৮৫ শতাংশ এবং রাতে ২২.২৬ শতাংশ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়