মহসিন কবির: বিশ্বে বিমান দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে। একদিনে ৩টি বড় বিমান দুর্ঘটনা ঘটলো। তাও কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ঘটছে। রোববার (২৯ ডিসেম্বর) কানাডা ও নরওয়ের দুর্ঘটনায় তেমন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও দক্ষিণ কোরিয়ার খবর নজর কেড়েছে বিশ্ববাসীর।
দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদ সংস্থা ইয়োনহাপের খবরে বলা হয়েছে, দেশটির মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ১৭৯ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় দুইজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
জানা গেছে, জিজু এয়ার প্লেনের ওই ফ্লাইটে ১৭৫ যাত্রী এবং ছয়জন ক্রু সদস্য ছিলেন। প্লেনটি থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক থেকে ফিরছিল। এটি রানওয়েতে অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার ন্যাশনাল ফায়ার এজেন্সি জানিয়েছে, পাখির আঘাতের কারণে বিমানটির ল্যান্ডিং গিয়ারে সমস্যা হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে এবং ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, অবতরণের সময় মাটিতে চাকা না থাকায় বিমানটি রানওয়েতে পিছলে যাচ্ছিল।
এদিকে নরওয়ের রাজধানী অসলোতেও একটি যাত্রীবাহী বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। আমস্টারডামগামী ওই বিমানটি ১৮০ জনেরও বেশি আরোহী নিয়ে জরুরি অবতরণ করেছে।
বিমান বিধ্বস্তের আগে পাখির আঘাত বিষয়ে সতর্ক করেছিল নিয়ন্ত্রণ টাওয়ারবিমান বিধ্বস্তের আগে পাখির আঘাত বিষয়ে সতর্ক করেছিল নিয়ন্ত্রণ টাওয়ার
আনাদুলো এজেন্সির খবরে বলা হয়, অসলো থেকে আমস্টারডামগামী একটি যাত্রীবাহী বিমান হাইড্রোলিক ত্রুটির কারণে টর্প বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে। অবতরণের সময় বিমানটি রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে।
বিমানের রেডিও ট্রান্সমিশনে বলা হয়, পাইলটরা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। বিমানের বাম দিকের ইঞ্জিন থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখে পাইলটরা অবতরণের জন্য কন্ট্রোল রুমকে দমকল বাহিনীকে প্রস্তুত থাকার অনুরোধ জানান। সৌভাগ্যক্রমে, বিমানে থাকা ১৮২ জন আরোহীর (১৭৬ জন যাত্রী এবং ৬ ক্রু সদস্য) কেউই আহত হননি।
এছাড়া কানাডাতেও একটি বিমান রানওয়ে থেকে ছিটকে আগুন ধরে যায়। এয়ার কানাডার এসি২২৫৯ বিমানটি সেন্ট জন’স থেকে হালিফাস্কে উড়ে আসে। কিন্তু অবতরণের সময়ই ঘটে বিপত্তি। হ্যালিফ্যাক্স বিমানবন্দরে অবতরণের সময় রানওয়েতে পিছলে গিয়ে বিমানের একটি অংশে আগুন ধরে যায়। তবে কোনোরকমে বেঁচে যান যাত্রীরা।
হালিফাস্ক বিমানবন্দরে দুর্ঘটনার বেশ কয়েকটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। ভাইরাল এক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, হ্যালিফ্যাক্স রানওয়ে দিয়ে ছুটে চলেছে একটি বিমান। সেই বিমানের এক অংশে আগুন জ্বলছে।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) দুর্ঘটনার মুখে পড়ে আজ়ারবাইজান এয়ারলাইন্সের ইআরজে-১৯০ বিমান। সেটির গন্তব্য ছিল রাশিয়া। স্থানীয় সময় ভোর ৩টে ৫৫ মিনিটে বাকু থেকে রাশিয়ার চেচনিয়া প্রদেশের গ্রজ়নির উদ্দেশে সেটি রওনা দিয়েছিল। কাজ়াখস্তানের আকতুতে কাসপিয়ান সাগরের পূর্ব উপকূলে আচমকা বিমানটি ভেঙে পড়ে। ঘন কুয়াশার কারণে সেটির পথ ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কাজ়াখস্তানের বিমানবন্দরে তার জরুরি অবতরণ করার কথা ছিল। কিন্তু অবতরণের আগে বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারায়। রুশ সংবাদমাধ্যমের তরফে দাবি করা হয়, একঝাঁক পাখির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। তবে এখনও দুর্ঘটনার কারণ নিশ্চিত করে জানানো হয়নি।
রোববার (২২ ডিসেম্বর) দক্ষিণ ব্রাজ়িলের পর্যটন শহর গ্রামাদোতে ১০ জন যাত্রী নিয়ে ভেঙে পড়ে একটি বিমান। দুর্ঘটনার জেরে মৃত্যু হয় বিমানের সব যাত্রীর। যাত্রিবাহী বিমানটি প্রথমে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি বাড়ির চিমনিতে ধাক্কা মারে। এর পর আরও একটি বাড়ির দোতলায় গিয়ে দ্বিতীয় বার ধাক্কা খায় সেটি। শেষমেশ বিমানটি একটি দোকানের উপর হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। মুহূর্তে আগুন ধরে যায় সেটিতে। একই দিনে পাপুয়া নিউ গিনিতে একটি বিমান ভেঙে পড়ে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়। কী কারণে সেটি ভেঙে পড়ল, তা এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়।
১৮ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনার সান ফার্নানদো বিমানবন্দরের কাছে একটি বিমান গাছে এবং পাঁচিলে ধাক্কা খায়। তার পরেই আগুন লেগে যায় বিমানটিতে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওই বিমানের দুই পাইলটের। ১৭ ডিসেম্বর হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের হনুলুলু বিমানবন্দরের কাছে একটি পণ্যবাহী বিমান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ভেঙে পড়ে। কী কারণে বিমানটি ভেঙে পড়ল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। মনে করা হচ্ছে পাইলটদের প্রশিক্ষণ চলার সময়ে বিমানটি ভেঙে পড়ে।
আপনার মতামত লিখুন :