শিরোনাম
◈ কুষ্টিয়ায় পদ্মার ভাঙনে জাতীয় গ্রিডের টাওয়ার নদীতে বিলীন ◈ ভারতে থাকার মেয়াদ শেষ হচ্ছে, কোন আইনের বলে ভারতে থাকবেন শেখ হাসিনা? ◈ (২০ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার ◈ স্থিতিশীল ডলারের দর, ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও ◈ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘গ্যারান্টিতে’ নগদ টাকার সংকট কাটছে যে ৫ ব্যাংকের ◈ হত্যাকাণ্ড নিয়ে অপপ্রচার চলছে, জাবিতে কোন কমিটিই নেই : ছাত্রদল ◈ গণপিটুনিতে মৃত্যু: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দুঃখপ্রকাশ, বৈষম্যবিরোধীদের নিন্দা, ফেসবুকে নানা সমালোচনা ◈ ভারতের গোলা যাচ্ছে ইউক্রেনে, ক্ষুব্ধ রাশিয়া ◈ সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সুনামগঞ্জে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার গ্রেফতার ◈ মব জাস্টিস শুধু সহিংসতা ও অন্যায় সৃষ্টি করে: সমন্বয়ক হাসনাত

প্রকাশিত : ০৪ জুলাই, ২০২২, ০১:১৪ দুপুর
আপডেট : ০৪ জুলাই, ২০২২, ১১:০৪ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জুনে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫২৪, আহত ৮২১ 

সড়ক দুর্ঘটনা

মাজহারুল ইসলাম, শরীফ শাওন : জুন মাসের সড়ক দুর্ঘটনায় মোট ৫২৪ জন নিহত এবং ৮২১ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪২.১৮ শতাংশ।  ১৯৭ টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ২০৪ জন, যা মোট নিহতের ৩৮.৯৩ শতাংশ। মোট নিহতদের মধ্যে নারী ৬৮ ও শিশু ৭৩ জন। এই সময়ে ৮টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৯ জন নিহত, ১৬ জন আহত হয়েছে এবং ৩ জন নিখোঁজ রয়েছে। ১৮টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত এবং ৪ জন আহত হয়েছে।

সোমবার রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। সংস্থাটি জানায়, ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।

দুর্ঘটনা পর্যালোচনায় জানানো হয়, সড়ক দুর্ঘটনায় জুন মাসে প্রতিদিন গড়ে ১৭.৪৬ জন নিহত হয়েছে। দুর্ঘটনায় ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সী কর্মক্ষম মানুষ নিহত হয়েছেন ৪১৩ জন, অর্থাৎ ৭৮.৮১ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১০৭ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ২০.৪১ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৮৬ জন, অর্থাৎ ১৬.৪১ শতাংশ।
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে, ১১৭ টি দুর্ঘটনায় ১৩৯ জন নিহত। রাজধানী ঢাকায় ১৪ টি দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত ও ৬ জন আহত হয়েছে। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ১৩ টি দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত। একক জেলা হিসেবে ঢাকা জেলায় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ২৯ টি দুর্ঘটনায় ৪১ জন নিহত। সবচেয়ে কম রাঙ্গামাটি, মাগুরা, লালমনিরহাট ও সুনামগঞ্জ জেলায়। এই ৪টি জেলায় ৯টি সাধারণ মাত্রার দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনো প্রাণহানি ঘটেনি।
ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ২৫.০৫ শতাংশ, প্রাণহানি ২৬.৫২শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১৫.৪১শতাংশ, প্রাণহানি ১৪.৮৮শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৬.৪৮শতাংশ, প্রাণহানি ১৬.২২শতাংশ, খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ১৪.৩৪শতাংশ, প্রাণহানি ১৩.৯৩শতাংশ, বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৯শতাংশ, প্রাণহানি ৮.২০শতাংশ, সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ২.৭৮শতাংশ, প্রাণহানি ২.৬৭শতাংশ, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ১০.৪৯শতাংশ, প্রাণহানি ১১.৪৫শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৬.৪২শতাংশ, প্রাণহানি ৬.১০শতাংশ ঘটেছে।
দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ২০৪ জন (৩৮.৯৩শতাংশ), বাস যাত্রী ২৪ জন (৪.৫৮শতাংশ), ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি-ডাম্পার আরোহী ৩৯ জন (৭.৪৪শতাংশ), মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-জীপ যাত্রী ১৪ জন (২.৬৭শতাংশ), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা-হিউম্যান হলার) ১০৬ জন (২০.২২শতাংশ), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-ভটভটি-মাহিন্দ্র-চান্দেরগাড়ি)১৩ জন (২.৪৮শতাংশ) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-প্যাডেল ভ্যান আরোহী ১৭ জন (৩.২৪শতাংশ) নিহত হয়েছে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৫৯টি (৩৪.০৪শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে, ১৭৪টি (৩৭.২৫শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে, ৭২টি (১৫.৪১শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে এবং ৫৬টি (১২শতাংশ) শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৬টি ১.২৮শতাংশ সংঘটিত হয়েছে।

দুর্ঘটনাসমূহের ১০৩টি (২২.০৫শতাংশ) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৯৮টি (৪২.৩৯শতাংশ) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১০৯টি (২৩.৩৪শতাংশ) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেয়া, ৩৮টি (৮.১৩শতাংশ) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১৯টি (৪.০৬শতাংশ) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে- ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ ২৬.২২শতাংশ, ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি-তেলবাহী ট্যাঙ্কার-প্রিজনভ্যান-সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী ট্রাক ৪.২৮শতাংশ, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স-জীপ-পুলিশ পিকআপ, আর্মি ট্রাক ৩.৬৫শতাংশ, যাত্রীবাহী বাস ৯.৮৩শতাংশ, মোটরসাইকেল ২৬.৭৩শতাংশ, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা-হিউম্যান হলার) ১৮.৭৮শতাংশ, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন-(নসিমন-ভটভটি-টমটম-মাহিন্দ্র-চান্দের গাড়ি) ৬.৪৩শতাংশ, বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-প্যাডেল ভ্যান ২.৯শতাংশ এবং অন্যান্য (ডাম্পার-ড্রামট্রাক-রোড রোলার-ইটভাঙ্গার গাড়ি) ১.১৩শতাংশ।

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৭৯৩ টি। (ট্রাক ১৩০, বাস ৭৮, কাভার্ডভ্যান ২৪, পিকআপ ৫৪, ট্রলি ১১, লরি ৫, ট্রাক্টর ১৩, তেলবাহী ট্যাঙ্কার ২, প্রিজনভ্যান ২, ঢাকা সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী ট্রাক ১, মাইক্রোবাস ৮, প্রাইভেটকার ১৩, অ্যাম্বুলেন্স ৪, জীপ ২, পুলিশ পিকআপ ১, আর্মি ট্রাক ১, মোটরসাইকেল ২১২, থ্রি-হুইলার ১৪৯ (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা-হিউম্যান হলার), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ৫১ (নসিমন-ভটভটি-মাহিন্দ্র-টমটম-চান্দের গাড়ি), বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-প্যাডেল ভ্যান ২৩ এবং অন্যান্য ৯ টি (ডাম্পার, ড্রামট্রাক, রোড রোলার, ইট ভাঙ্গার গাড়ি)।
সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাসমূহ ঘটেছে ভোরে ৫.৭৮শতাংশ, সকালে ৩৩.৮৩শতাংশ, দুপুরে ২৪.৪১শতাংশ, বিকালে ১৫.৬৩শতাংশ, সন্ধ্যায় ৫.৩৫শতাংশ এবং রাতে ১৪.৯৮শতাংশ।

দুর্ঘটনার কারণ উল্লেখ করে বলা হয়, ১. ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন; ২. বেপরোয়া গতি; ৩. চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা; ৪. বেতন ও কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট না থাকা; ৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল; ৬. তরুণ ও যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো; ৭. জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা; ৮. দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা; ৯. বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি; ১০ গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি।

দুর্ঘটনা রোধে সুপারিশে জানানো হয়, ১. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে; ২. চালকের বেতন ও কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট করতে হবে; ৩. বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে; ৪. পরিবহনের মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; ৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্ব রাস্তা (সার্ভিস রোড) তৈরি করতে হবে; ৬. পর্যায়ক্রমে সকল মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে; ৭. গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে; ৮. রেল ও নৌ-পথ সংস্কার ও সম্প্রসারণ করে সড়ক পথের উপর চাপ কমাতে হবে; ৯. টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে; ১০.“সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮” বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

দুর্ঘটনা পর্যালোচনা ও মন্তব্যে বলা হয়, ট্রাক-সহ পণ্যবাহী দ্রুতগতির যানবাহন ও মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ ড্রাইভারদের বেপরোয়া গতিতে পণ্যবাহী যানবাহন চালানো এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোর কারণে তারা নিজেরা দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে এবং অন্যান্য যানবাহনকে আক্রান্ত করছে। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার উর্ধ্বমুখী প্রবণতা আমাদেরকে ভয়াবহ পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। গণপরিবহন সহজ, সাশ্রয়ী ও উন্নত করে, যানজট কমিয়ে মোটরসাইকেল নিরুৎসাহিত করা অতীব জরুরি।

সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে “সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮” বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে সড়ক পরিবহন খাতের নৈরাজ্য ও অব্যস্থাপনার কারণে। এই অবস্থার উন্নয়নে টেকসই সড়ক পরিবহন কৌশল প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা।   

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়